৩০ বছর পর ৩ ডুবুরি পাচ্ছে রংপুর ফায়ার সার্ভিস
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মাত্র তিনজন ডুবুরি দিয়ে চলছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধার কাজ। এতে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নদীসহ জলাশয়ে ডুবে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে উদ্ধার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
প্রায় তিন দশক ধরে দুইজন ডুবুরি দিয়ে উদ্ধার কাজ চালানোর পর গত ১৫ অক্টোবর মাত্র একজন ডুবুরি যোগ দিয়েছেন রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে। আগামী মাসে আরও দুইজন ডুবুরি এখানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তবে এ সংখ্যাও যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, প্রতিটি জেলায় অন্তত দুইজন করে ডুবুরি থাকা প্রয়োজন।
রংপুর বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। পানি গাড়ি, ফোম গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক উপকরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনের চেয়েও কম ডুবুরি থাকায় জরুরি উদ্ধার কাজ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রংপুরসহ বিভাগের গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় এবং নীলফামারী জেলা ও উপজেলা ফায়ার সার্ভিসগুলোতে পদ সৃষ্টি না হওয়ায় কোথাও কোনো ডুবুরি নেই। এসব জেলায় সেবা দেয়ার জন্য রংপুর বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসে যে ডুবুরি রয়েছেন তারাই কোথাও পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটলে আট জেলায় চষে বেড়ান। ফলে তাদেরকে বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ২৫ জন ডুবুরির একটি ইউনিট ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরে তাদেরকে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় পানিতে ডুবে যাওয়ার ৫৩টি ঘটনা তাদেরকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কোথাও উদ্ধার অভিযানে দুইজন একসঙ্গে যেতে হয়। একা এই কাজ করা যায় না।
বর্তমানে কর্মরত তিন সদস্যের ডুবুরি দলের একজন আব্দুল মতিন। ২০০৬ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন তিনি। চাঁদপুর ও রাজশাহীতে কাজ করার পর ২০১৫ সালে যোগ দেন রংপুরে। তাদের টিম লিটার শফিকুল ইসলাম রংপুরে যোগদান করেন ২০১৩ সালে।
এখানে চার বছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মতিন বলেন, এখানে প্রতিনিয়ত যত কল হয় তা অন্য কোথাও হয় না। দুজন ডুবুরি দিয়ে কাজ করতে হিমশিম খেতে হয়। কাজের চাপে টানা ৭দিন গাড়িতে করে ঘুরতে হয়েছে- এমন অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।
উদ্ধার তৎপরতা জোরালো করতে ডুবুরির সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান মতিন।
নগরীর শালবন এলাকার বাসিন্দা সাবেক রোভার স্কাউট সদস্য হুমায়ুন কবীর মানিক বলেন, বর্তমানে সরকারের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। জরুরি প্রয়োজনে সকলেই এ বিভাগের সহযোগিতা চায়। এ বিভাগের সকলের স্তরেই সক্ষমতা রাখা জরুরি।
তিনি বলেন, কেউ ডুবে গেলে তাকে দ্রুত উদ্ধার করতে না পারলে বাঁচানো কষ্টকর। এজন্য ডুবুরির মতো প্রয়োজনীয় পদ কম রাখা সমীচীন নয়।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আলম বলেন, রিজার্ভ ডুবুরি না থাকায় অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা ডুবুরির চাহিদা দিয়ে চিঠি দিয়েছি। ইতোমধ্যে একজন ডুবুরি যোগ দিয়েছেন। আশা করি ডুবুরির সংখ্যা বাড়বে। তবে প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে দুইজন করে ডুবুরি থাকা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
জিতু কবীর/এমবিআর/জেআইএম