ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ধীর গতিতে চলছে গাড়ি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ধীরে ধীরে চলছে গাড়ি। পশুবোঝাই ট্রাকের চাপ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে যানজট তীব্র আকারে ধারণ করেছে। আর এসব কারণে মহাসড়কে যান চলাচল করছে ধীর গতিতে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীবাহী বাসের নারী ও শিশুরা। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সোমবার সকাল ৬টার পর থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কুর্ণি থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল নয়টার পর থেকে মহাসড়কে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় গরুভর্তি একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকল হওয়া ট্রাকটি সোমবার সকালে সরিয়ে নেয়া হয়।
অন্যদিকে, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মহাসড়কের বাসাইল উপজেলার করতিপাড়া বাইপাস এলাকায় ঢাকাগামী একটি গরুভর্তি ট্রাক বিকল হয়। এরপর থেকেই যানজটের সৃষ্টি হয়।
গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, রাত ৩টার দিকে মহাসড়কের মির্জাপুরের ইচাইল নামক স্থানে গরু ভর্তি একটি ট্রাক সামনে থাকা অপর একটি ট্রাককে পেছনে ধাক্কা দিলে দুর্র্ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলেও মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক দুটি সরিয়ে নিতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে বলে তিনি জানান। এছাড়া মহাসড়কের কিরাতিপাড়া ও খাড়াজোড়া এলাকায় দুটি ট্রাক বিকল হলে যানজট সৃষ্টি হয়।
পুলিশ বলছে, উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরুভর্তি ট্রাক ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরমুখো মানুষ নিয়ে বাসের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া গত দুদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চলাচল করছে।
নাবিল পরিবহনের চালক মোর্তুজা বলেন, নীলফামারীর দেবীগঞ্জ থেকে বাস নিয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকালে ঢাকা পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা পরও মির্জাপুরে যানজটে আটকে আছেন।
অপরদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রতিদিন প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকছে। ফলে এই মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই রেল ক্রসিংয়ে উড়ালসেতু (ফ্লাইওভার) না থাকায় ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু রেল সংযোগ সড়কে ধেরুয়া রেল ক্রসিং হয়ে প্রতিদিন ১৪টি ট্রেন ২৮ বার চলাচল করে থাকে। প্রতিটি ট্রেন মহাসড়ক পার হওয়ার জন্য ৫ থেকে ৭ মিনিট আগে থেকেই গেটম্যান সিগন্যাল ফেলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে প্রতিদিন মহাসড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকছে। তাছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকে আরো দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন ৩০টি ট্রেন চলাচল করবে বলে মির্জাপুর স্টেশন মাস্টার আফছার আলী জানিয়েছেন।
যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ট্রেন পার হওয়ার আগ পর্যন্ত মহাড়কের দুই পাশে আটকে পড়ে শত শত যানবাহন। এভাবে দিনভর বারবার ক্রসিং আটকে দেয়ায় মহাসড়কে যান চলাচলের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রেলওয়ে মির্জাপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ রেল সড়কে প্রতিদিন ধূমকেতু এক্সপ্রেস ৭৭০/৭৭১, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৭২৫,৭২৬, রংপুর এক্সপ্রেস ৭৭১/৭৭২, একতা এক্সপ্রেস ৭০৫/৭০৬, নীলসাগর এক্সপ্রেস ৭৬৫/৭৬৬, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ৭৫৩/৭৫৪, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ৭৫৭/৭৫৮, চিত্রা এক্সপ্রেস ৭৬৩/৭৬৪, লালমনি এক্সপ্রেস ৭৫১/৭৫২, পদ্মা এক্সপ্রেস ৭৫৯/৭৬০, লোকাল মেইল ট্রেন ৫৫১/৫৫২, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ৭৭৫/৭৭৬, চট্রগ্রাম থেকে মালগাড়ি (তেলভর্তি) ৯৮১/৯৮২ এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস এই ১৪টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। এই ট্রেনগুলোর যাওয়া-আসার জন্য প্রতিদিন অন্তত ২৮ বার ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে বার ফেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়।
মির্জাপুর বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন শিকদার জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। তাদের হিসেবে এই সড়কে প্রতি মিনিটে গাড়ি চলে ২১টি। ঈদকে সামনে রেখে এই মহাসড়কে প্রায় দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ধলেশ্বরী গাড়ির যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে মির্জাপুর রেল গেট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার রাস্তা আসতে যেখানে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগার কথা সেখানে তার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি হওয়ায় চালকরা গাড়ির গতি কমিয়ে চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী বাসচালক আব্দুল কাদের মিয়া ও উত্তরবঙ্গ থেকে গরু ভর্তি ট্রাকের চালক বেল্লাল হোসেন বলেন, রেল গেটে তাদের প্রায়ই আটকা পড়তে হয়। রেল গেটগুলোতে উড়াল সেতু নির্মাণ করা হলে এই মহাসড়কে যানজট অনেক কমবে বলে তাদের ধারণা।
এস এম এরশাদ/এআরএ/আরআইপি