বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি : নিখোঁজ ৪০ জেলে
বঙ্গোপসাগরে রোববার গভীর রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বাগেরহাটের জেলেদের ৮টি ট্রলার ও প্রায় ৪০জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে ৭৫ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে কোস্টাল ক্যারাইসেস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, দুবলারচর, কচিখালী ও সুপতী কোস্টগার্ড স্টেশনে রেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে অনেক ট্রলার এখনো বঙ্গোপসাগরে ভাসতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুবলার চরে ঝড়ের কবলে পড়ে বেঁচে যাওয়া জেলেরা। সাগর উত্তাল থাকায় সোমবার সকাল পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে জেলেদের উদ্ধারে আবারো উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হবে বলে কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে।
দূঘটনার কবল থেকে বেঁচে আসা জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের ১ নং ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় শত শত জেলেরা ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝড়ো হওয়া ও উঁচু ঢেউয়ে অনেক ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এ সময় অনেকে সাতরে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেন।
এদিকে, খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭৫ জেলেকে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী জীবিত উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। এদের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী,বগা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। তবে এখন পর্যন্ত জেলার ৮টি জেলেদের ট্রলার এবং ৪০/৫০ জন জেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঝড়ের কবলে পড়া এখনো অসংখ্য ট্রলার সাগর ও সুন্দরবন সংলগ্ন কটকা, কচিখালী, সুপতি, নারকেলবাড়িয়া এলাকায় রয়েছে বলে জেলেদের সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার সকালে বাগেরহাটের দড়াটানা নদীর তীরে সাগর থেকে ইলিশ মাছ এনে বিক্রির আড়ৎ কেবিবাজারে অনেকের স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মা ছেলের জন্য, স্ত্রী তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছেন।
কেবি বাজারের ঘাটে কথা হয় বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার বগা এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ও নিখোঁজ এফ ভি শাহজালাল ট্রলারের মালিক হানিফ ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তার মেঝ ভাই আবুল ব্যাপারীর এফবি সজল ও মামা আবুল বাওয়ালীর এফবি রুপক ট্রলারের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের তিনটি ট্রলার ডুবে গেছে না কোথাও আশ্রয় নিয়েছে তার কোনো খবর তিনি এখনো পাননি। তিনটি ট্রলারে থাকা তার ভাই, মামাসহ ৪২জনের কারো সঙ্গেই এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।
ঝড়ের কবল থেকে বেঁচে আসা এফবি মামা ভাগ্নে ট্রলারের মাঝি শহিদ মোল্লা জানান, ঝড়ের সময়ে ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারে ইঞ্জিনের দরজা ভেঙে তিনি ও ইমারত আলী সাগরে পড়ে যায়। পরে ট্রলার থেকে রশি ফেলা হয়। অনেক কষ্টে তারা ট্রলারে উঠতে সক্ষম হয়। শহিদ মোল্লা বলেন সাগরে অসংখ্য ট্রলার ভাসতে দেখেছেন।
কথা হয় বাগেরহাট শহরের ট্রলার ব্যবসায়ী মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার দুটি ট্রলারের মধ্যে একটি মামা ভাগ্নের ১৩ জন স্টাফ সোমবার সকালে কোনো মতে ফিরে এসেছে। অপরটি এফবি মদিনার এখনো কোন সন্ধান পাননি।
কেবি বাজারের দড়াটানা নদীর পাড়ে প্রহর গুণছেন এক বৃদ্ধা মা তার সন্তানের জন্য। সঙ্গে রয়েছে তার পুত্রবধূ রিমা বেগম (২১)। একমাত্র আড়াই বছরের দুধের সন্তান তামিম মোল্লাকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত এনামুল মোল্লার কোনো খোঁজ পাননি তার পরিবার। তাই ট্রলার ঘাটে রোববার বিকাল থেকে এনামুলের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও শিশু ছেলের অপেক্ষা।
সোমবার সকালে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র দে বাগেরহাট কেবি বাজার প্রধান মৎস্য আড়তে গিয়ে নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের বিষয়ে খোঁজ নিতে দেখা গেছে। মৎস্য বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাত পর্যন্ত নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড শতাধিক জেলেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়েছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট ,কচুয়া ও শরণখোলার ৭টি ট্রলারডুবি এবং ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে বাগেরহাটের নিখোঁজদের অনেকেই থাকতে পারেন বলে তিনি ধারণা করছেন। তবে এখনো কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে কেউ মারা গেলে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো.জাহাঙ্গীর আলম এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দুবলার অদূরে সাগরে দুজনের মরদেহ ভেসে থাকার খবর তিনিও শুনেছেন। তবে তারা কোনো জেলার তা জানা যায়নি। তিনি বলেন, সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নিখোঁজ জেলেদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর বাগেরহাট জেলার কেউ নিখোঁজ রয়েছেন কিনা সেটা জানা যাবে।
শওকত আলী বাবু/এসএস/এমএস