ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে

জেলা প্রতিনিধি | পাবনা | প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ০১ অক্টোবর ২০১৯

পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পানি পরিমাপ করার পর এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৩ সালে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল।

এদিকে পদ্মা ও এর শাখা নদীতে পানি বাড়ায় পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার নিম্নাঞ্চলের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাউবো সূত্র জানায়, উজান থেকে প্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসায় পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

আমাদের পাবনা জেলা প্রতিনিধি জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কবীর মাহমুদ। তিনি (ডিসি) বলেন, পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা সবাই সচেষ্ট রয়েছেন। প্রশাসন পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখছেন।

পাবনা পাউবোর হাইড্রোলজি বিভাগের উত্তরাঞ্চলীয় নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহিরুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। সকাল ১০টায় বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। এর আগে সকাল ৯টার পরিমাপ অনুযায়ী, বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো, পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার।

তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫/৬ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

এদিকে পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ হেক্টর ফসলি ও নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির নানা জাতের ফসল।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এবার উজানে প্রবল বর্ষণ ও ধেয়ে আসা পানির ফলে পদ্মা নদীর কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত রক্ষা বাঁধের দুই থেকে তিন ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশের ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলসহ জমি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বসতভিটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীকুন্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। তবে পানি না কমা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক পাওয়া কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ ওরফে কুল ময়েজ জানান, কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে এমনিতেই কৃষকদের মাঠের শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শত শত কৃষক এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

Padma-3

পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, যে গতিতে পদ্মায় পানি বাড়ছে তাতে ধারণা ছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মায় যে হারে পানি বাড়ছে, তা নদী তীরবর্তী এলাকাসহ আশপাশের জনমানুষের জন্য অশনি সংকেত। বৃহৎ ক্ষতির আগেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। উজানের পানির বেগ জানান দিচ্ছে, বিপদ আসন্ন।

অপরদিকে জেলার বাংলা বাজার লঞ্চঘাট, সুজানগর, নাজিরগঞ্জ, চলনবিল, বড়াল, গোমতি, চিকনাইসহ ছোট খাটো বিলে পানি বেড়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণের সঙ্গে পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পরিমাণটা বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
আমাদের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি জানান, পদ্মায় পানি বাড়ায় দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারির পর ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এদিকে পদ্মায় পানি বাড়ায় এর শাখা গড়াই নদীতেও প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। জিকে ঘাট ছাড়াও বড় বাজার এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে বেশ কিছূ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কুষ্টিয়া রক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, পানি এই মুহূর্তে বিপৎসীমার কয়েক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পর ভেড়ামারা উপজেলার মোসলেমপুরে পানি ঢুকছে। এছাড়া কুষ্টিয়া শহর, কুমারখালী ও খোকসার কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, পদ্মায় পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পারিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে। আরও ত্রাণ প্রয়োজন হলে আনা হবে। ইতোমধ্যেই সব রকম প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।

একে জামান/আল-মামুন সাগর/এমএমজেড/এমকেএইচ

আরও পড়ুন