পদ্মায় বিলীন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ শতাধিক ঘরবাড়ি
পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় দফা ভাঙনে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের হাসপাতালসহ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচটি স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বহু স্থাপনা ও ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রথম দফা শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা এই তিনটি ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দেয়। কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের মাগুরখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদীর স্রোতের তোড়ে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ভাঙনের মুখে রয়েছে তিনটি স্কুল ভবনসহ পাঁচটি স্কুল, দুটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র-কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন হাটবাজারসহ তিন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও হাজারও বসতবাড়ি। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদ তীরবর্তী সন্নাসীরচর ও শিরুয়াইল ইউনিয়ন দুটিও আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ১ আগস্ট ভাঙনের ভয়াবহতা পরিদর্শনে আসেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাৎক্ষণিক নির্দেশে পদ্মা নদীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও আড়িয়াল খাঁ নদের দুটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলে ভাঙনের গতিবেগ কমে আসে।
কিন্তু গত কয়েক দিনের অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে তীব্র স্রোতের তোড়ে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। ফলে গত সোমবার দুপুরে ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়ে চরাঞ্চলের দ্বিতল বিশিষ্ট কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটির অধিকাংশ বিলীন হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফা ভাঙনে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙন কবলিতরা ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বিস্তৃর্ণ জনপদ। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাসপাতালসহ বহু স্থাপনা ও ফসলি জমি।
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) নওয়াব ফকির জানান, প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেলে এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হলেও কোনো জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
শিবচরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল নোমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে ভাঙন আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। চরের একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ কে এম নাসিরুল হক/আরএআর/পিআর