অভাবের কারণে ছোটই থেকে গেল রাজু
নাম ইমতিয়াজ হোসেন রাজু। দেখে বুঝার উপায় নেই তার বয়স ১৮ বছর। বয়সের তুলনায় উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট। বয়সে তরুণ হলেও আচরণ শিশুর মতো।
প্রতিবন্ধী হিসেবে তার নাম নিবন্ধন হলেও এখনও জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। রাজু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের উত্তরনারায়নপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান মিঠুর ছেলে। সে উত্তরনারায়নপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
প্রতিবেশী সালাউদ্দিন জানান, এলাকার অন্যসব শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবেই রাজুর জন্ম হয়েছে। কিন্তু সবার মতো সে বেড়ে ওঠেনি। এ কারণে সমাজে তাকে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি জানান, ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দর্জি বাবার সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।
রাজুর মা উম্মেছাবিহা জানান, ছোট অবস্থায় রাজু খুব কান্না করতো। হাটতে শেখার সময় তার শরীরের মাংস পেশি শক্ত হতে শুরু করলে তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পর সে অনেকটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে আর ভালো চিকিৎসা করানো হয়নি।
রাজু বলেন, আমার বন্ধুরা সবাই অনেক লম্বা, কিন্তু আমি ছোটই থেকে গেলাম। এটা ভেবে প্রথমে একটু খারাপ লাগতো। তবে আমি ছোট বলে বন্ধুরা আমাকে নিয়ে মজা করে না। আর স্কুলের শিক্ষকরাও আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তবে প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে খারাপ মন্তব্য করলে মন খারাপ হয়। তিনি আরও বলেন, সমাজের আর দশজনের মতো লেখাপড়া করে বড় হতে চাই।
রাজুর বাবা মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, ডাক-বাংলো বাজারে একটি টেইলার্সের দোকানে দর্জি হিসেবে কাজ করেন তিনি। এ কাজ করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে কোনোভাবে চলে তার সংসার।
তিনি বলেন, রাজুর বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম, এজন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি তাতে কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে জমি বিক্রি করে গত বছর কোলকাতা পিজি হাসপাতারের ডাক্তার শুভদ্বীপকে দেখালে, তিনি জানিয়েছেন রাজুর শরীরের হরমন জনিত কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আরও আগে থেকে চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হতো, তবে এখন চিকিৎসা করাতে পারলে কিছুটা লম্বা হবে। কিন্তু অর্থের অভাবে আর ভালো চিকিৎসা করানো হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অলোক কুমার সাহা জানান, সাধারণত জন্মের ১৫ দিন পর থেকে এসব রোগীর চিকিৎসা শুরু করাতে পারলে ভালো হয়। এখন তার বয়স ১৮ বছর। এমন অবস্থায় তার শারীরিক বৃদ্ধি ঘটানো প্রায় অসম্ভব। তবে চিকিৎসা করাতে পারলে কিছুটা লম্বা হতে পারে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল মামুন জানান, তিনি ছেলেটির সম্পর্কে শুনেছেন। তার পরিবারকে ছেলের কাগজপত্র দেখানোর কথা বলেছেন। কাগজপত্র হাতে পেলে রাজুর প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএএস/এমকেএইচ