ঈদের বাজার ধরতে ব্যস্ত খামারিরা
এবার ভারতীয় গরু-ছাগল পর্যাপ্ত পরিমাণ না আসায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যশোরের বেনাপোল ও শার্শা উপজেলায় অন্তত ১ হাজার ৬ শত ৭৮টি খামারে পালিত হচ্ছে লাখো গরু ও ছাগল। ঈদের বাজার ধরতে পশুর পরিচর্যায় এখন খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খামার মালিকদের দাবি, তাদের খামারে পালিত প্রতিটি গরুর দাম লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি গরু থেকে পাওয়া যাবে ৮ থেকে ২২ মণ মাংস। কোরবানির ঈদ বাজারে সরবরাহের জন্য বাইরের ব্যবসায়ীরা শার্শার খামারিদের কাছ থেকে গরু নিতে শুরু করেছেন।
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে শার্শার উলাশি বাজারের পাশে তুহিনা বেগমের গরুর খামার। খামারে রয়েছে ৩৮টি গরু। তুহিনা বলেন, ১২ বছর আগে মাত্র বারো হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে এই ব্যবসায় আসি। ভারত থেকে গরু আসার কারণে প্রতি বছর লোকসানে পড়েছি। এ বছর গরু আসা কমে যাওয়ায় ভালো লাভের আশা করছি। গত সপ্তাহে ১০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছি।
গরু খামার ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকেই এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন। পশুর উপযুক্ত দাম পাওয়া গেলে ভারত থেকে গরু আনার দরকার হবে না। স্থানীয় খামারিরাই দেশের মাংসের জোগান দিতে পারবেন বলে মনে করেন তুহিনা বেগম।
শার্শা উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা জয়দেব সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌরসভায় মোট ১ হাজার ৪২টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারের মধ্যে ৮১৬টি গরু মোটা-তাজাকরণ খামার আর ২২৬টি গাভীর দুধের ছোট-বড় খামার। ছাগলের খামার আছে ৬৩৬টি।
বেনাপোলের সীমান্তবর্তী পুটখালী গ্রামের নাসির উদ্দিনের খামারটি এখন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর খামার বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সরকার গরু খামার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে গত জুনে প্রত্যেক খামার ব্যবসায়ীদের ৫ শতাংশ সুদে ৪০ হাজার টাকা অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছেন। কিছু দিনের মধ্যে তার বাস্তবায়ন শুরু হবে। কোন সমস্যার বিষয়ে যখন খামার ব্যবসায়ীরা ডাকেন তারা যায়। কিন্তু তারা যে পরামর্শ দেন অনেক ক্ষেত্রে খামার ব্যবসায়ীরা সেটা নিতে চান না। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার থাকে না বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম পুটখালীর পশ্চিমপাড়ায় সাত বছর আগে এই গরুর খামার গড়ে তোলেন ওই গ্রামের নাসির উদ্দিন। শুরুর দিকে এই খামারে অল্প সংখ্যক গরু থাকলেও এখন গরুর সংখ্যা ২০০টি। এ সকল গরুর সার্বক্ষণিক পরিচর্যা ও দেখভালের দায়িত্বে আছেন ২৫ জন কর্মচারী। এই খামারের প্রতিটি গরুর মূল্য সর্বনিম্ন ২ লাখ উর্ধ্বে ৭ লাখ। এক একটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ বলতে গেলে এক মে. টনেরও বেশি। শুধু গরু না একই সঙ্গে এখানে পালন করা হচ্ছে উট ও ছাগল। তবে তার সংখ্যা কম।
খামার মালিক নাসির বলেন, ভারতীয় গরু দিয়েই সাত বছর আগে প্রথমে গরুর খামার ব্যবসা শুরু করি। ভারত থেকে আনা গরু এবং স্থানীয় বাজার থেকে কেনা প্রতিটি গরুকে ৬/৭ মাস খামারে রেখে পরিচর্যা করার পর বিক্রি করলে ভালোই লাভ হওয়ায় এই ব্যবসার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। কোরবানি উপলক্ষে গত ১৫ দিনে তার খামারের ১শ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়েছে। এতে তার ভালোই লাভ হয়েছে।
গত বছরের শেষের দিকে বিএসএফ এর বাড়াবাড়িতে ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় এই খামার ব্যবসায় জোর দেয়। বর্তমানে আমার ২টি খামার রয়েছে। সন্তানের মত খেয়াল রেখে গরু লালন-পালন করে আজ আমি একজন সফল খামারি বললেন নাসির উদ্দিন।
ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন খামার ব্যবসায় জোর দিয়েছেন। একজন আদর্শ খামারি হিসেবে ত্রিমোহিনী শ্যামলাগাছির আশানুর রহমান, সাদিকুর রহমান, খলিলুর রহমান, নারানপুরের তারিক হোসেন, মিজানুর রহমান, বারিপোতার সাইদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, শার্শার সমর সরকার খামারে গরু পালন শুরু করেছেন। ওই সব খামারে গিয়ে দেখা যায়, গরুর মাথার উপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা, নিচে কার্পেট বিছানো। মশা মাছির উৎপাত থেকে রক্ষার জন্য টাঙানো রয়েছে মশারি। খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আর সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা।
খামার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় গরুর চাপে অন্তত পাঁচ বছর তারা এই খাতে কোন সুফল পাননি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তবে এবার সুফল আসতে শুরু করেছে বলে জানান খামারিরা।
এদিকে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, ৬ মাস আগেও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গরু আসতো। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কড়াকড়িতে এখন প্রতিদিন তার পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে এক থেকে দেড়শ। এতে পূর্বে যে গরুর দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকারও বেশি। অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ কোরবানি দিতে পারছে না। দেশের গবাদি পশুর খামারগুলোতে যদি বেশি বেশি করে গরু পালন করা হয় তাহলে এই সংকট থেকে কিছুটা উত্তরণ হওয়া সম্ভব। এতে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হবে বলে জানান তারা।
জামাল হোসেন/এসএস/এমএস