পাঁচ দশকেও বিএসটিআই-বিএসআইআরের শাখা হয়নি বেনাপোলে
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় ৪৭ বছর আগে। এই পথ চলার প্রায় পাঁচ দশক হতে চললেও বন্দরটিতে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের কোনো শাখা না থাকায় খাদ্যদ্রব্যসহ অনেক পণ্যই পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না এখানে।
এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া, মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে ভোক্তাদের ওপর। তবে কিছু কিছু কেমিক্যাল বেনাপোল কাস্টমস হাউজে স্থাপিত ল্যাবে পরীক্ষণ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাদ্যদ্যব্যের কাঁচামাল, কসমেটিকসসহ কিছু পণ্যের নমুনা বন্দরের বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। সেই রিপোর্ট আসতে কখনো কখনো এক মাসেরও বেশি লেগে যায়। এতে তারা যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হন, তেমনি বন্দরে লম্বা সময় পণ্যের চালান আটকে থেকে গুণগত মানও নষ্ট হয়। এ কারণে দেশের এই বৃহত্তম স্থলবন্দরে পণ্য পরীক্ষণের নিজস্ব ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় বেনাপোল কাস্টমসের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানানো হয়েছে, পরীক্ষাগার স্থাপনের বিষয়টি ইতোমধ্যে তারা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ আসে বেনাপোল দিয়ে। এ পথে বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। যা থেকে সরকারি কোষাগারে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব জমা হয়।
বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য বন্দরে খালাসের আগে পরীক্ষণ বাধ্যতামূলক। বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে বিভিন্ন ধরনের সাড়ে তিন শতাধিক পণ্য আমদানি হয়। যার মধ্যে খাদ্যের কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প কারখানার কেমিক্যাল জাতীয় ৫৫টি পণ্য পরীক্ষণ সার্টিফিকেট ছাড়া খালাস করা যায় না। কিন্তু এর ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই বেনাপোলে। ফলে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য, খাদ্যদ্রব্যের কাঁচামাল, কসমেটিকস ও শিল্প কারখানার কেমিক্যাল বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে এক মাসেরও বেশি সময় নষ্ট হয়। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আমদানিকারক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ভারত থেকে যে সব পণ্য বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ খাদ্যদ্রব্য আর শিশুখাদ্য। বন্দরে পণ্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় খুলনা বা ঢাকা থেকে নমুনা পরীক্ষা করাতে ১৫ থেকে ২০ দিন আবার কখনো এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়। এতে দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য বন্দরে পড়ে থাকায় অনেক সময় মানও নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি আমদানি পণ্য বন্দর শেডে বা ট্রাকে রেখে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। তারপরও এসব পণ্য পরীক্ষণে যে টাকা ব্যয় হয় তাতে মাঝে মধ্যে দেখা যায় সরকারি শুল্কের চেয়ে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের যে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে তা নিরসন হওয়া দরকার। এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি পণ্য আমদানি করতে এলসিসহ ধাপে ধাপে বিভিন্ন খরচ আছে। পরীক্ষণ সমস্যায় লম্বা সময় পণ্যের চালান আটকে থাকলে সব খরচ ব্যবসায়ীদের ঘাড়ের ওপর পড়ে। এছাড়া সময়মতো কাঁচামাল কারখানায় না পৌঁছালে তা কাজে লাগাতে পারেন না ব্যবসায়ীরা।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা করাতে হয় এমন অনেক পণ্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রফতানি হয়। কিন্তু সেখানে ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে পণ্যের রিপোর্ট ই-মেইলের মাধ্যমে চলে আসে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বেনাপোল বন্দরে এ সুবিধা নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৫টি পণ্যের বাইরে যদি কোনো খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয় তবে মানুষের খাবারের উপযোগী এমন সার্টিফিকেট দিলে ওই পণ্য পুনরায় আর পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে এমন সুবিধা পেলে বেনাপোলেও অনুরূপ সুবিধা দেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দিক-নির্দেশনার বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা আছে। ফলে সেখানে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেনাপোলে এ সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এতে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রভাব পড়ে বাজারে ভোক্তার ওপর। বেনাপোল বন্দর কাস্টমস হাউজে স্বল্পপরিসরে বিএসটিআইয়ের একটি শাখা চালু হয়েছে। আর বিসিএসআইআরসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন হয়, সে জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
মো. জামাল হোসেন/এমএমজেড/এমএস