শিগগিরই খুলে দেয়া হচ্ছে কক্সবাজারের জন্মনিবন্ধন সার্ভার
রোহিঙ্গা ঢলের পর বন্ধ থাকা জন্মনিবন্ধন সার্ভার শিগগিরই খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সার্ভার বন্ধ থাকায় স্থানীয়দের নানামুখী দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এ টি এম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক একথা জানান।
মতবিনিময় সভায় রোহিঙ্গা সংকট, উখিয়া-টেকনাফের আইন-শৃঙ্খলাসহ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ সব বয়সের মানুষের জন্য জরুরি একটি উপকরণ। জমি রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ভোটার হওয়াসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজে জন্মনিবন্ধন অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে জন্মনিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করা হয়। এরপর থেকে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছিল। এ নিয়ে স্থানীয়রা বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। এসব দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা সবিস্তারে উল্লেখ থাকায় আশা করছি শিগগিরই সার্ভার খুলে দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সার্ভার বন্ধ করে ভিন দেশিদের ভোটার হওয়া বা পাসপোর্ট পাওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। এসব জন্মনিন্ধন আসে জনপ্রতিনিধি ও জনসম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার শাখাগুলো থেকে। এখানে দায়িত্বরত মানুষগুলো বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের পরই জন্মনিবন্ধন সরবরাহ করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
সভায় ক্যাম্প ও উখিয়া-টেকনাফের চলমান নানা সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। এতে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে সবাই একমত হন।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত আরআরআরসি মো. সামশুদ্দোহা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাহান আলী, ডিজিএফআইয়ের লে. কর্নেল রুবাইয়াত, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী, টেকনাফের ইউএনও রবিউল হাসান, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় নেয়ার পর কক্সবাজার ও পার্বত্য তিন জেলায় জন্মনিবন্ধন সার্ভার কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ধ করে দেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের গণহারে জন্মনিবন্ধন পাওয়ার ভয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ও জন্মনিবন্ধন নিয়ে পাসপোর্ট পাওয়া কোনোভাবেই থেমে থাকেনি। স্থানীয় কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি ও আইটি বিশেষজ্ঞ টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন সদন সরবরাহ করে। মাঝখানে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।
সায়ীদ আলমগীর/এমবিআর/পিআর