বেনাপোলে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়
দেশে স্থলপথে যত পণ্য আমদানি-রফতানি হয়, তার ৭৫ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ পথে ব্যবসা করতে আগ্রহী। বাণিজ্য সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করে সরকার এরই মধ্যে চার দেশের মধ্যে (ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) ট্রানজিট চুক্তি করেছে। এক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। কিন্তু অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে বাণিজ্য প্রসার করতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে বাড়বে আমদানি-রফতানির পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও।
যায়, দেশে অনুমোদিত স্থলবন্দর আছে ২৩টি। এগুলোর মধ্যে সচল রয়েছে ১১টি স্থলবন্দর। এর মধ্যে ছয়টি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাকি পাঁচটি চলছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। অন্যান্য ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সচল ১১টি বন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় বেনাপোল থেকে।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এসব পণ্য এক লাখ ২২ হাজার ৩৩৫টি ট্রাকে আমদানি করা হয়। একই সময়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয়েছে ১৯ লাখ ৯০ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন। এসব পণ্য এক লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৪টি ট্রাকে খালাস করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি পণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৪০৩ কোটি টাকা কম। এ সময়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম হয়। তবে বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানি আরও বাড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল রয়েছে। বাইরের দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাঁচা পাট ও পাটের তৈরি পণ্য।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, দেশের স্থলপথে যত পণ্য আমদানি-রফতানি হয়, তার ৭৫ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন করছে, তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এটা নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ আছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হলে এখান থেকে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে।
বেনাপাল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু কাজও শুরু হয়েছে। অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে কিছু জায়গা অধিগ্রহণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। দ্রুত এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
জামাল হোসেন/এএম/পিআর