সিলেটে বাড়ছে ধর্ষণ-নির্যাতন, তিন মাসে ৮৩ মামলা
সিলেটে একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা। বিগত তিন মাসে সিলেটে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনায় ৮৩টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ ওসমানীনগরে বাবার লালসার শিকার হয়েছে এক শিশু।
বিশিষ্টজনদের মতে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কাটণেই দিন দিন বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী। এছাড়া যৌন হয়রানি এবং অন্য নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন অনেকে।
সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের তথ্য মতে, গত মে থেকে জুলাই পর্যন্ত এই তিন মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনায় ৪৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া সিলেট মহানগর এলাকায় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় আরও ৩১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, মে থেকে জুলাই মাসে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে নারী ধর্ষণের মামলা ১৬টি ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ১৫টি।
তিনি জানান, গত মে মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮টি। এর মধ্যে নারী ধর্ষণের ঘটনায় গোলাপগঞ্জে ১টি, জকিগঞ্জে ১টি, বিয়ানীবাজারে ১টি, কোম্পানীগঞ্জে ১টি ও জৈন্তাপুরে ১টি। তাছাড়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জে ২টি, জৈন্তাপুরে ১টি মামলা হয়েছে। জুন মাসে নারী ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর ও কানাইঘাটে ২টি। তাছাড়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে।
এরপর জুলাই মাসে ধর্ষণের মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩টিতে। এর মধ্যে নারী ধর্ষণের ঘটনায় গোলাপগঞ্জে ১টি, জকিগঞ্জে ৩টি, গোয়াইনঘাটে ২টি, কোম্পানীগঞ্জে ১টি ও জৈন্তাপুরে ২টি মামলা হয়। তাছাড়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ওসমানীনগরে ১টি, জকিগঞ্জে ১টি, কানাইঘাটে ১টি ও কোম্পানীগঞ্জে ১টি মামলা করা হয়।
এদিকে সিলেট মহানগর এলাকায় মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে নারী ধর্ষণের মামলা ৯টি ও শিশু ধর্ষণের মামলা ৮টি। তাছাড়া বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকারের ঘটনায় আরও ৩৪টি মামলা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানান, তিন মাসে শিশু-নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় ৫২টি মামলা হয়েছে। বেশির মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, মে মাসে নগরীর ৬ থানায় ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৫টি। এর মধ্যে নারী ধর্ষণের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় ১টি, বিমানবন্দর থানায় ১টি, শাহপরানে ১টি ও মোগলাবাজার থানায় ১টি। অপরদিকে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জালালাবাদ থানায় ১টি ও শাহপরাণ থানায় ১টি। তাছাড়া ওই মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকারের ঘটনায় আরও ১১টি মামলা হয়েছে।
জুন মাসে নারী ধর্ষণের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২টি, জালালাবাদে ২টি, বিমানবন্দরে ২টি ও শাহপরান থানায় ১টি মামলা হয়েছে। অপরদিকে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ চেষ্ঠা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ঘটনায় আরও ১২টি মামলা হয়েছে।
জুলাই মাসে নারী ধর্ষণের ঘটনায় একটি ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্নভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১টি।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, নারীর সুরক্ষায় যেসব আইন আছে, সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে নির্যাতনকারীরা নারী নির্যাতন করতে ভয় পাচ্ছে না। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের কারণে অনেক সময় নির্যাতনকারীর চেয়ে নির্যাতিতাকে বেশি হেনস্তা করা হয়। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক নারী চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আইনের আশ্রয় নিতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা তাদের কাছে নেই। তাছাড়া ভিকটিমদের জন্য যে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে এ তথ্যও নেই অনেকের কাছে।
ফারুক মাহমুদ বলেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বিচার না হওয়া এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী ও শিশুদের প্রতি নৃশংসতা বাড়ছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারলে এসব ঘটনা আরও বাড়বে।
ছামির মাহমুদ/আরএআর/পিআর