ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

১৬০ একর জমি পেল উখিয়ার উন্মুক্ত কারাগার

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাস্তবে রুপ পাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রস্তাবিত উম্মুক্ত কারাগার। দেশের প্রথম উন্মুক্ত এ কারাগার নির্মাণ করতে ১৬০ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। মালয়েশিয়ার উন্নত কারাগারের আদলে উখিয়ার বড়বিল গ্রামে তৈরি হবে বহুল প্রত্যাশিত এ কারাগার। ভূমি মন্ত্রণালয়ের দেয়া এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রকল্পস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি টিম।

উন্মুক্ত কারাগার প্রকল্পের জন্য ১৬০ একর খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তু পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ জানান, কারা অধিদফতরের আবেদন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব এবং সুপারিশের প্রেক্ষিতে উখিয়া উপজেলাধীন পাগলির বিল মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ৮০৩ নম্বর দাগের ১৬০ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মালয়েশিয়ার সিআরপির আদলে লঘু অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৬০ একর জমি জুড়ে এ কারাগার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জেল সুপারের মতে, এ কারাগার হবে মূলত সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। উম্মুক্ত কারাগারে বন্দিরা কারাগারের সীমানার মধ্যেই থাকবেন। তবে কাজের জন্য তারা বাইরে যাওয়া-আসার সুযোগও পাবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন কারাগার রয়েছে। এসব কারাগার মূলত সংশোধনাগারের আদলে গড়ে তোলা হয়। আমাদের এখানেও একইভাবে কারাগারটি নির্মাণ করা হবে।

কারা মহাপরিদর্শক একেএম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, এটি একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। দুর্গম এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ চিত্র পাল্টে যাবে। গ্রামে শহরের ছোঁয়া লাগবে। উম্মুক্ত কারাগারে বন্দিরা যেমন সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন, তেমনি গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কারাগারের বাউন্ডারির মধ্যেই থাকবে শিল্প-কারখানা। কারাবন্দিরা সেসব কারখানায় কাজ করতে পারবেন। আবার কিছু কারাবন্দিদের জন্য কারাগারের বাইরেও কাজ করার সুযোগ থাকবে। তারা সকালে কাজের জন্য বাইরে যাবেন, কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন।

উন্মুক্ত কারাগার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার রীতেশ চাকমা বলেন, নির্ধারিত সাজার অর্ধেকের বেশি সময় যেসব বন্দি পার করেছেন এবং যারা কারাগারে ভালো আচরণ করেছেন কেবল তাদেরই উন্মুক্ত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এই প্রশিক্ষণে যারা ভালো করবেন, তাদের উন্মুক্ত কারাগারের বাইরেও কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে। এসব বন্দি সকালে কাজের জন্য কারাগার থেকে বেরিয়ে যাবেন, সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার উন্মুক্ত কারাগারে ফিরে আসবেন। কেউ ফিরে না এলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রাসেল চৌধুরী বলেন, উখিয়ার কৃতি সন্তান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের একান্ত প্রচেষ্টায় হলদিয়ার অনুন্নত ও পিছিয়ে থাকা একটি গ্রামে উম্মুক্ত কারাগারটি হচ্ছে। বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হলদিয়ার গ্রামীন জনপদে আমূল পরিবর্তন আসবে। কল কারখানা, দোকানপাট, মসজিদ মাদরাসা স্কুলসহ গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্থাপনা। যোগাযোগ ব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নতি হবে। সারাদেশের দৃষ্টি কাড়বে এই উম্মুক্ত কারাগার।

হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কয়েক দফা উম্মুক্ত কারাগারের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেন জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দের নেতৃত্বে উখিয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কারা সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত কারাগারের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শনে উখিয়ার বড়বিল গ্রামে যান সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। তিনি গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

তিনি বলেছিলেন, জেলখানায় থাকা বন্দিরা আমাদের কারও ভাই, বন্ধু বা স্বজন। তাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সরকার উন্মুক্ত কারাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে। ’

এদিকে বন্দোবস্তের আওতায় আসা ১৬০ একর জমির যেসব স্থানে জনবসতি রয়েছে তাদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। বন্দোবস্তকৃত জমি ও আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির স্থান পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। গতকাল বুধবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তারা এসব জমি পরিদর্শন করতে যান বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী। জমিতে যাওয়ার আগে তারা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন