মুক্তি কক্সবাজার’র কার্যক্রম স্থগিত
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদন না নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য ৬ হাজার পিস নিড়ানি তৈরির ঘটনায় ‘মুক্তি কক্সবাজার’এর ছয়টি প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এ পত্রে স্থগিত করে দেয়া প্রকল্পগুলো হলো- নন ফরমাল এডুকেশন ফর দ্যা চিলড্রেন অব রোহিঙ্গা, স্ট্রেইং রিসাইলেন্স অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি অব রোহিঙ্গা অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটি অব টেকনাফ, ইমপ্রোব অব ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ফর রোহিঙ্গা অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটি, এনহেন্চিং লার্নিং আউটকাম ফর রোহিঙ্গা ইন উখিয়া, ইমপ্রোব ওয়াস থ্রো ফিক্যাল স্লাগড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাথিং কিউরিক্যাল ফর রোহিঙ্গা ও প্রোটেকশন ইনিটিয়েটিভ ফর আনকমপেনিড অর অরফান চিলড্রেন ইন কক্সবাজার।
মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, আমাদের চলমান একটি প্রকল্পের নিড়ানি তৈরি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। না জেনে সংবাদকর্মীরা সেখানে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন। যেকোনো এনজিওর ভালো-মন্দ কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা তদন্ত করে দেখে এনজিও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনজিও ব্যুরো। যেহেতু আমাদের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে, সেহেতু তা তদন্তের স্বার্থে প্রকল্পগুলো স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তি কক্সবাজারের ৩০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখান থেকে ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। আশা করছি এনজিও ব্যুরো তদন্তের মাধ্যমে প্রকল্পের কোনো অনিয়ম পাবে না। তখন আবারও এসব প্রকল্প সচল করার অনুমতি দেবে।
সূত্র মতে, উখিয়ার ভালুকিয়ায় এক কামারের দোকানে তৈরি করা নিড়ানি সদৃশ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে অবগত না করে গোপনে এসব অস্ত্র তৈরি করে তা রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মুক্তি কক্সবাজারের পক্ষ থেকে বলা হয়- টেকনাফের হ্নীলার জাদিমুড়া এলাকায় চলামান হোস্ট কমিউনিটির চাষাবাদ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের পর তাদের সরবরাহ দিতেই এসব নিড়ানি টেন্ডারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছিল। তবে ৬শ স্থানীয় সেখানে প্রশিক্ষণ নিলেও ২৬০০ নিড়ানি তৈরি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এ বিষয়ে মুক্তি কক্সবাজারের দেয়া উত্তরও সন্তোষজনক ছিল না। এছাড়াও কৃষি বিভাগ বলছে, নিড়ানি সদৃশ যেসব বস্তু পাওয়া গেছে তা কৃষিকাজে ব্যবহার্য নিড়ানির সাইজের সঙ্গে মিলে না। এসব নিড়ানি সাইজে হাতলসহ সর্বোচ্চ এক ফুট দৈর্ঘের হয়। কিন্তু উখিয়ায় উদ্ধার নিড়ানি সদৃশ বস্তুগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট।
স্থানীয়দের মতে, নিড়ানি সদৃশ এসব বস্তু ও এর পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে মুক্তি কক্সবাজারের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। তাদের দুরভিসন্ধি ধরা পড়ার পর সর্বস্তরের মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মুক্তি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ইস্যু বন্ধের দাবি জানান তারা।
আরও অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘিরে যে কয়েকটি এনজিও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তার মাঝে মুক্তি কক্সবাজার অন্যতম। তারই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতেই গোপনে বিপুল দেশীয় অস্ত্র সররবাহ করছিল তারা। এ চালানটি ধরা পড়লেও আগে দা, কুড়াল ও খুন্তিসহ আরও নানা ধরণের দেশীয় অস্ত্র রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করেছে মুক্তি কক্সবাজার ও অন্য আরও একাধিক এনজিও।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেছেন মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর পাঠানো একটি পত্রের কপি পেয়েছি। এনজিও মুক্তি কক্সবাজারসহ অন্যান্য এনজিওগুলোর কার্যক্রম আরও গভীরভাবে নজরে নিতে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, বিষয়টি অনভিপ্রেত। এনজিও ব্যুরোর পত্রটি অফিসে এসেছে। মুক্তি কক্সবাজারসহ সবার কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর