সন্তানের জন্য বাঁশিওয়ালা বাবার আকুতি
স্কুল শেষে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল ৯ বছরের শিশু সানি আহম্মেদ। পুরো রাস্তা বন্ধুদের নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে বাড়ির সামনে একটি প্রাইভেটকারের সামনে এসে পড়ে সে। এ সময় প্রাইভেটকারটি সানির ডান পায়ের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যায়। এতে তার গোড়ালিসহ পুরো পায়ের ওপরের অংশের মাংস আলাদা হয়ে হাড় বের হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তার লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে রেফার্ড করা হয়।
ঘটনাটি গত ২৭ জুন দুপুর ১২টার। এরপর থেকে সানিকে প্রতিদিন বাসা থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পায়ের ক্ষতস্থানে ড্রেসিংয়ের জন্য। এতে ৫শ টাকা করে খরচ হয়। গত দুই মাসে তার চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তার বাবা রুবেল আহম্মেদ।
তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে বাঁশি ও দোতারার দোকান করেন। পাশাপাশি আগ্রহীদের বাঁশি বাঁজানো শেখান। একসময় তার বাবাও সেখানে একই ব্যবসা করতেন। তিনি স্থানীয়ভাবে বাঁশিদাদু হিসেবে পরিচিত।
রুবেল আহম্মেদ নিজের সামান্য আয় দিয়ে আর ছেলের চিকিৎসা চালাতে পারছেন না। প্রতিদিন ছেলের চিকিৎসা বাবদ যে ব্যয় হয় সেই পরিমাণ আয়ও করতে পারছেন না তিনি। এরই মধ্যে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন, ছেলের পায়ের একটা অপারেশন করতে হবে। এজন্য ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ করলেই সুস্থ হবে সানি।
রুবেল আহম্মেদ পুরান ঢাকার সাতরওজা মাজার এলাকার আগাসাদেক লেনে ভাড়া থাকেন। সম্প্রতি ছেলের চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য একটি মানবিক আবেদন নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ জাগো নিউজ কার্যালয়ে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, শুধু টাকার জন্য এতদিন ছেলের পায়ের অপারেশন করাতে পারিনি। কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দুই মাস ধরে ছেলেটা স্কুল যাওয়ার জন্য খুব জেদ ধরছে। অথচ সে বিছানা থেকেই নামতে পারছে না। টাকা থাকলে হয়তো তার চিকিৎসা করে এতদিন সুস্থ করে তুলতে পারতাম। সে স্কুলেও যেতে পারতো। জানি না কবে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।
রুবেল বলেন, চারুকলার সামনে আগে বাবা বাঁশি বাজানো শেখাতো। এখন আমি শেখাই। অসুস্থ সন্তানকে বাসায় রেখে বাঁশি বাজানোর সময় বাঁশির সুরে শ্রোতারা বিমোহিত হলেও আমার অন্তরে বাজছে কান্নার সুর। তিনি বলেন, সব সুর মুগ্ধতা দেয় না, কিছু সুর রক্তক্ষরণ করে।
সানির মা স্বপ্না খাতুন বলেন, একে তো ছেলে অসুস্থ। তারপর সংসারে অভাব। সারাদিন দোকানে যা বিক্রি হয় তার চেয়েও বেশি খরচ হয় ছেলের পায়ের ড্রেসিং করতে। দুই মাস ধরে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বাড়ির আশপাশের দোকান থেকে বাকিতে খাবার কিনছি।
তিনি বলেন, সানির বাবা ও দাদু চারুকলা এলাকায় বেশ পরিচিত। অথচ তাদের ভেতরের কষ্টের কাহিনি কেউ জানে না। এসব জনে জনে বলাও যায় না। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য হৃদয়বান মানুষগুলোর সহযোগিতা চেয়ে বলেন, গত দুই মাসে ছেলের যন্ত্রণা দেখে নিজেও কেঁদেছি। আর পারছি না।
সানির বিষয়ে খোঁজ নিতে কথা বলতে পারেন তার বাবা রুবেল আহম্মেদের সঙ্গে। মোবাইল : ০১৯০৭-৬৪৫২৩৪। এ নম্বরে বিকাশের মাধ্যমেও সহযোগিতা করা যাবে।
এমএএস/এমকেএইচ