ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রেমিকের বাড়িতে মাদরাসাছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

জেলা প্রতিনিধি | রাজবাড়ী | প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৯

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল এলাকায় প্রেমিক রায়হানের বাড়িতে মাদরাসাছাত্রী প্রিয়া আক্তারের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত প্রিয়ার পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি- ফোনে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রিয়াকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বললেও এখন বলছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রিয়ার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট (সোমবার) দিবাগত রাতে প্রিয়া আক্তারের এ রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে

নিহত প্রিয়া আক্তার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের হাউলি কেউটিল গ্রামের দরিদ্র সন্তোস মোল্লার মেয়ে ও গোয়ালন্দ দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তার প্রেমিক রায়হান শেখ (২৫) একই গ্রামের বারেক শেখের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি। ঘটনার পর থেকে রায়হানের পরিবার পলাতক রয়েছে।

এদিকে গত ২২ আগস্ট নিহত প্রিয়ার ভাই রানা মোল্লা বাদী হয়ে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ২ নং আমলি আদালতে রায়হান শেখ (২৫), রায়হানের বাবা বারেক শেখ (৬০) ও মা রেজি বেগমকে (৪০) আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল এলাকার সন্তোষ মোল্লার ছোট মেয়ে প্রিয়ার সঙ্গে একই এলাকার বারেক শেখের ছেলে দর্জি রায়হানের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়ের পরিবার থেকে ছেলের পরিবার আর্থিক দিক দিয়ে কিছুটা স্বাবলম্বী। যার ফলে ছেলে ও মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হলেও ছেলের পরিবার সেটি মানতে রাজি হয়নি। ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) রায়হানের অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। কিন্তু বিয়ের ৪ দিন আগে ১৯ আগস্ট (সোমবার) দিবাগত রাতে প্রিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু হয় প্রেমিক রায়হানের বাড়িতে। ওই বাড়িতে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

এলাকাবাসী বলেন, প্রিয়া আত্মহত্যা করতে পারে না। সে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। যে দিন প্রিয়া মারা যায় সেদিন বিকেলে রায়হানের ছোট ভাই প্রিয়াকে একটি মোবাইল ফোন দিয়ে যায় এবং সেই ফোনের মাধ্যমে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রিয়াকে রায়হান তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মধ্যে রাতে রায়হানের বাড়ির বাড়ান্দায় প্রিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়। প্রিয়ার মুখে, ঘাড়ে, চেয়ালে, হাতে, পিঠেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু রায়হানের পরিবার বলছে প্রিয়া তাদের বাড়ির একটি কাঁঠাল গাছের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আসলে তারা বাঁচার জন্য মিথ্যা বলছে। প্রিয়া হত্যার মূল কারণ উদঘাটন করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।

রায়হানের প্রতিবেশী বাদশা জানান, ঘটনার দিন রাতে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে উঠে তিনি রায়হানদের বাড়িতে কথার শব্দ শুনে গিয়ে দেখেন বারান্দায় প্রিয়ার মরদেহ পড়ে আছে। পড়ে তিনি প্রিয়াদের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানান।

প্রিয়ার বাবা সন্তোষ মোল্লা বলেন, রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এ সময় রায়হানের পাশের বাড়ির বাদশা এসে তাকে ডেকে তুলে প্রিয়ার মৃত্যুর খবর দেয়। আমার মেয়েকে রায়হান আর ওর বাবা-মা মিলে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

মামলার বাদী প্রিয়ার ভাই ভাই রানা মোল্লা বলেন, রায়হান ও প্রিয়ার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনা এলাকার অনেকেই জানতো। ঘটনার দিন বিকেলে রায়হানের ছোট ভাই প্রিয়াকে একটি ফোন দিয়ে যায়। রাতে ফোন করে প্রিয়াকে ডেকে নিয়ে যায় রায়হান। অনেক রাতে রায়হানের প্রতিবেশী বাদশা এসে প্রিয়ার মৃত্যুর খবর দেয়। তখন দৌড়ে গিয়ে দেখি রায়হানদের বাড়ির বারান্দায় প্রিয়ার মরদেহ পড়ে রয়েছে। দেখে মনে হয়নি যে প্রিয়া আত্মহত্যা করেছে। প্রিয়াকে ডেকে নিয়ে ওরা খুন করেছে।

তিনি আরও বলেন, সকাল হবার পর থানায় গিয়ে জানালে পুলিশ আসে। কিন্তু থানায় মামলা লেখার পরও থানায় কোন মামলা হয়নি। পড়ে ২২ আগস্ট কোর্টে রায়হান ও তার মা বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কোন সন্দেহ নাই প্রিয়াকে ওরাই হত্যা করেছে। ভাই হিসেবে ওদের সবার সর্বোচ্চ শ্বাস্তি ফাঁসি চান।

গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম জানান, মেয়েটির হত্যা বা আত্মহত্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। উভয় পক্ষের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহও রয়েছে। তাই মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন। এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার জানান, প্রিয়া নামের মেয়েটির ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি গতকাল রোববার পর্যন্ত তার টেবিলে আসেনি। তবে রিপোর্টটি তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। আজ রিপোর্টটি আসতে পারে।

রুবেলুর রহমান/আরএআর/পিআর

আরও পড়ুন