‘আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেন’
ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আগামীকাল সোমবারও তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ বৃহস্পতিবার শুরু হয়। ওই দিন শেষ না হওয়ায় পরবর্তী কার্যদিবস আজ রোববার বাকি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এদিনও তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। সোমবার অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় মোট ৯২ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তালিকায় শাহ আলম শেষ সাক্ষী।
আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম আদালতে রোববার তিনি ১২ আসামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।’
তিনি জানান, শুরু থেকে আসামিদের আটক করতে গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়। গুপ্তচরের দেয়া তথ্যে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে নুর উদ্দিন, মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীম, রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে মকসুদ আলম, বসিলা থেকে হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ আসামিদের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। শাহ আলম বলেন, কয়েকজন আসামির দেয়া তথ্যে অপরাপর আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামিরা আদালতে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তার সঙ্গে তদন্তকালে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলায় জব্দ করা নানা আলামতের বিষয়ে আদালতে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম একদম শেষের দিকে। এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অভিযোগপত্র প্রদানকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলমের সাক্ষ্য শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হবে। এ মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পাঁচজন আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত না হলেও ডকুমেন্টারি সাক্ষ্য দেয়ায় তারা সাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন। কারণ তাদের পক্ষে আদালতে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/জেআইএম