আজ তোকে মেরেই ফেলব
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান। ফিল্মি স্টাইলে আকস্মিক তার ওপর হামলা চালায় এক যুবক। হামলাকারীর নিরাপত্তা দিচ্ছিল চার যুবক। দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আরও কয়েকজন যুবক।
হামলাকারী ওই যুবক বেধড়ক মারপিট করে ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমানকে। মারপিটের দৃশ্য ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। গত সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের শ্বেতপুর বটতলা এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মো. মতিয়ার রহমান আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বার বার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও কুন্দুরিয়া গ্রামের মৃত. গোলাপ গাজীর ছেলে। ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের জেরেই এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জাগো নিউজকে জানান ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আ.ব.ম মোসাদ্দেক হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ৫ আগস্ট আমিসহ ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফেজ মো. রবিউল ইসলাম ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য মমতাজ বেগম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগের পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান। তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে আমাদের তিন ইউপি সদস্যের পেছনে লাগিয়ে দেন।
মতিয়ার রহমান আরও বলেন, অভিযোগ দায়েরকে কেন্দ্র করে ১৯ আগস্ট দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে রাস্তায় ৭-৮ জন যুবক আমার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। আমাকে বলতে থাকে, আমার ভাই আলমগীর তোর কাছে ২৪ হাজার টাকা পাবে, টাকা দে। টাকা না দিলে তোকে যেতে দেব না। আমি আলমগীরকে আদৌ চিনি না। এরপর বলে কবির টাকা পাবে। তখন আমি বলি, যদি টাকা পায় তবে আসো এক জায়গায় বসে আলোচনা করি। এরপর আমাকে মারপিট করতে শুরু করে বুধহাটা এলাকার হাতেম সরদারের ছেলে মাদকসেবী ইমন সরদার। মারতে মারতে তারা বলে আজ তোকেই মেরেই ফেলব। পাশে দাঁড়িয়ে ইমনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল বুধহাটা এলাকার জাহিদ, নাহিদ, সুজন, হাবিবুল্লাহ ও সানোয়ার। আমার ওপর হামলাকারী ও হামলার সহযোগীরা চেয়ারম্যানের বাহিনী। হামলা শেষে চলে যাওয়ার সময় তারা বলে, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার ফল এটা।
৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফেজ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করার কারণে ১১ আগস্ট বুধহাটা বাজারে চেয়ারম্যানের ক্যাডার সাদ্দাম, এজদাম ও হাতেম আমার ওপর হামলা চালায়। বলতে থাকে, তোর সাহস হলো কি করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার। বাড়ি থেকে বের হলে তোকে শেষ করে ফেলব। তোকে যেন আর বাজারে না দেখি।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা, কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে, বিভিন্ন সময় গরিব দুস্থদের চাল কম দেয়। আমরা বাধা দেয়ায় আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ তিনি। এসব নিয়ে অভিযোগ দেয়ার কারণে আমাদের জীবনের এখন নিরাপত্তা নেই।
সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, এসব ঘটনা আশাশুনি ওসিকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা তিন ইউপি সদস্য ২০ আগস্ট পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো সুফল মেলেনি। চেয়ারম্যানের ক্যাডারদের তাণ্ডবে রাস্তায় বের হতে পারছি না আমরা।
এসব ঘটনার বিষয়ে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ.ব.ম মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আশাশুনি থানা পুলিশের ওসি আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ইউপি সদস্যদের মারপিট করেছে বা মারপিট করে ভিডিও ফেসবুকে দিয়েছে এমন ঘটনা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
আকরামুল ইসলাম/এএম/এমএস