ঘুষের টাকা গুনে গুনে পকেটে নেন তিনি
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হেড কেরানির (উচ্চমান সহকারী) ঘুষ গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্দ, মেরামত বাবদ অনুদান, ওয়াশ ব্লক ও রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ বরাদ্দকৃত টাকার ছয় থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে অফিসের উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের বিরুদ্ধে।
আলাউল হোসেন ও আরিফুল ইসলামসহ কয়েকটি ফেসবুক আইডিতে সোমবার রাত থেকে ঘুষ গ্রহণের এই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনকে কাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনি ঘুষের টাকা দিচ্ছেন। টাকা টেবিলের নিচে নিয়ে গুনে তা প্যান্টের পকেটে রাখছেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের নির্দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্দ, মেরামত বাবদ অনুদান, ওয়াশ ব্লক ও রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ বরাদ্দকৃত টাকার ছয় থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিচ্ছেন অফিসের উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক সহকারী শিক্ষা অফিসার বলেন, ১৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭৫টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক বিল তৈরি বাবদ উচ্চমান সহকারীর মাধ্যমে বরাদ্দের আট থেকে ১০ ভাগ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন শিক্ষা অফিসার।
সোনাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, হাটবাড়িয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাতেনসহ অনেকে বলেন, সরকার প্রদত্ত স্কুলের উন্নয়নকাজের বিল গ্রহণে অগ্রিম ঘুষ প্রদানে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
রোববার আমোষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পরিচয়ে স্লিপ বরাদ্দের টাকার চেক গ্রহণে উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বিল করতে রাজি হন বলে জানান খোকন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে ব্যবস্থা গ্রহণে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম। এছাড়াও তিনি শিক্ষা অফিসারসহ অফিসের সব কর্মকর্তাদের ডেকে অপরাধীদের কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না বলে সতর্ক করেছেন।
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেন বলেন, ঘুষের টাকা আমি গ্রহণ করিনি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন বলেন, গোলজার হোসেনের ঘুষ গ্রহণের তথ্য আমি পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ঘুষ গ্রহণে নিজে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সাঁথিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম বলেন, ফেসবুকে পাওয়া ভিডিও ক্লিপ দেখে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি আমি।
এএম/এমএস