প্রেমিকার জন্য কোরবানির মাংস পুঁতে ফেললেন মাতব্বররা
প্রেমিকাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেলেন প্রেমিক। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি গ্রাম্য মাতব্বররা। এ অবস্থায় প্রেমিকের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়।
একই সঙ্গে প্রেমিকের বাবার কোরবানির মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলেন মাতব্বররা। প্রেম ও বাল্যবিয়ের অভিযোগে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গ্রামের পাঁচ মাতব্বরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষক কুদ্দুস শেখ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের থেউকান্দি গ্রামের জসমত আলীর ছেলে কুদ্দুস শেখ একজন প্রান্তিক কৃষক। তার ছেলে কবির হোসেন ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। কর্মস্থলে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রায় দেড় মাস আগে প্রেমিকাকে নিয়ে বাড়িতে যান কবির হোসেন।
পরে বিয়ে না করে একই ঘরে অবস্থান করে প্রেমিক-প্রেমিকা। এতে কৃষক কুদ্দুসের ওপর ক্ষুব্ধ হন গ্রাম্য মাতব্বররা। পরে পাশের রৌহাবাড়ি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় কর্মস্থলে চলে আসেন কুদ্দুসের ছেলে ও পুত্রবধূ।
এদিকে, কোরবানিতে অংশ নেয়ার জন্য গ্রাম্য মাতব্বর সাইফুল ও হায়দার আলীর কাছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা দেন কৃষক কুদ্দুস। তারা কুদ্দুসকে সঙ্গে রেখে সাত ভাগে কোরবানি দেয়ার জন্য একটি গরু কেনেন।
এরই মধ্যে কুদ্দুসের ছেলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাল্যবিয়ের অভিযোগ তোলেন গ্রাম্য মাতব্বররা। একই সঙ্গে কোরবানির আগের রাতে কুদ্দুসকে সমাজচ্যুত করে তারা।
এ অবস্থায় ঈদের দিন কোরবানির কাজে কুদ্দুসকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। সেই সঙ্গে কোরবানির ভাগের মাংস কুদ্দুসকে না দিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখে গ্রাম্য মাতব্বররা। এ ঘটনায় সোমবার রাতে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কুদ্দুস।লিখিত অভিযোগে থেউকান্দি গ্রামের মাতব্বর সাইফুল ইসলাম, হায়দার আলী ও আজিবরসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করেন কৃষক কুদ্দুস।
এ বিষয়ে কৃষক কুদ্দুস শেখ বলেন, আমার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সমাজের লোকজনকে খাওয়ানোর খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা দাবি করেন গ্রাম্য মাতব্বররা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় আমাকে সমাজচ্যুত করা হয়। সেই সঙ্গে আমার ভাগের কোরবানির মাংস মাটিতে পুঁতে রাখে তারা। আমাকে তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি আমি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গ্রাম্য মাতব্বর সাইফুল ইসলাম বলেন, কুদ্দুসের ছেলে বিয়ে না করে এক তরুণীকে নিয়ে বাড়িতে রাত কাটায়। বিষয়টি নিয়ে কুদ্দুসকে শাসন করা হয়েছে। তাকে সমাজচ্যুত করা হয়নি। কুদ্দুসের ভাগের কোরবানির মাংস তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মাংস মাটিতে পুঁতে রেখে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন কুদ্দুস। তারপরও বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ধুনট থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল জাব্বার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কোরবানির মাংস মাটিতে পুঁতে রাখার সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিমন বাসার/এএম/জেআইএম