৩০ লাখ টাকার গোলাপ বাগান উজাড়, কাঁদছেন চাষি
সাভারে রাতের আঁধারে ৪৫ শতাংশ জমিতে ইজারা নিয়ে লাগানো এক কৃষকের গোলাপ ও সবজির বাগান কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। পরে পেট্রল ঢেলে কাটা গাছগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয় মো. লিয়াকত আলী, কুতুব উদ্দিন সজীব ও উত্তমসহ ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চাষি আম্বর আলী। গত রোববার ভোররাতে উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নিবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চাষি আম্বর আলী বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে স্থানীয় এবাদত শিকদার ও তার স্বজনদের কাছ থেকে বছরে ২০ হাজার টাকায় ৪৫ শতাংশ জমি নিয়ে গোলাপ বাগান করেছি। রোববার রাত ৩টার দিকে আমি ফুল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগে গেলে স্থানীয় মাদকসেবী মো. লিয়াকত আলী, কুতুব উদ্দিন সজীব ও উত্তমসহ ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী আমার বাগানের সব গাছ কেটে ফেলে এবং পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর গোলাপ বাগান থেকে ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করা হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে আমার ১০ লাখ টাকা লাভ হয়। কেটে ফেলা বাগানটি নতুন করে করতে গেলে প্রায় ১০ লাখ টাকা দরকার। বাগানটি বর্তমান অবস্থায় আসতে দুই বছর সময় লাগবে, যেখানে আমার আরও ২০ লাখ টাকার আয় হতো। সব মিলিয়ে বাগানটিতে আমার ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হওয়ায় এখন আমার পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বাগানে কর্মরত শ্রমিক আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে বাগানটিতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করি। এখন বাগানটি সন্ত্রাসীরা কেটে ফেলায় আমার মাথায় হাত পড়েছে। কোথায় নতুন করে কাজ করব এবং কে কাজ দেবে তা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার।’
স্থানীয় জাকির হোসেন বলেন, জমির মালিকের ছেলে জাহাঙ্গীর কাকা আমাকে রোববার ভোরে ফোন করে বলে আমাদের গোলাপ বাগানটি কারা যেন কেটে ফেলেছে তুমি গিয়ে একটু দেখ। আমি তার কথামতো বাগানে এসে দেখি তাদের আত্মীয় মো. লিয়াকত আলী ও তার স্ত্রী, কুতুব উদ্দিন সজীব ও উত্তমসহ অনেক লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুরো বাগানটি কেটে ফেলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত লিয়াকত আলী বাগান কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জমিটি ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা দাবিকারীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতেই বাগানটি কাটা হয়েছে।
অপর অভিযুক্ত কুতুব উদ্দিন সজীব বলেন, আমাদের জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু আদালত দখলের গুরুত্ব দেখে মামলার রায় দেয় বিধায় জমিটি দখলে নেয়ার জন্য বাগান উপড়ে ফেলা হয়েছে। জমি নিয়ে মামলা আছে, কিন্তু বাগান তো পত্তন নিয়ে চাষ করছে কৃষক। এখন তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে জমির মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিটি আমার দাদা বাবাকে দান করে গেছেন এবং বর্তমান বিএস রেকর্ড ও দখল সবই আমাদের। কিন্তু হঠাৎ করে জমির মালিকানা দাবি করে সন্ত্রাসী কায়দায় রাতের আঁধারে জমিতে কৃষকের ফুল বাগান কেটে উজাড় করা আইনগত অন্যায় কাজ। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার চাই।
সাভার মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী বলেন, গোলাপ বাগান কেটে ফেলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আল-মামুন/এএম/এমকেএইচ