হত্যার পর অপমৃত্যুর প্রচার!
নওগাঁর মান্দায় ব্যাটারি চুরির অপবাদে তহির উদ্দিন (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে নিজ বাড়ির উত্তর পার্শ্বে রাকিব নার্সারি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত তহির উদ্দিন উপজেলার চক-কুসুম্বা গ্রামের লাল মোহাম্মদের ছেলে।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিন আগে একই গ্রামের মৃত আকবরের ছেলে সুলতান মাহমুদের ট্রাক্টরের ব্যাটারি কে.কে বিক্স নামের ইটভাটা থেকে চুরি হয়। এ ঘটনায় তহির উদ্দিন জড়িত বলে সন্দেহ করেন সুলতান মাহমুদ ও তার লোকজন। তারা বিভিন্নভাবে তহির উদ্দিনকে খোঁজাখুঁজি করেন।
তারা জানান, রোববার রাতে তহির প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিকে নিজের নাতীকে দেখতে যান। সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে কলিম, আব্দুল মালেক এবং ময়নুলসহ কয়েকজন তাকে থামতে বললে তিনি দৌড় দেন। এরপর থেকেই তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
তারা আরও জানান, আজ (সোমবার) সকাল ৭টার দিকে নার্সারিতে শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে তহিরের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় জানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের পরিবারের দাবি তহিরকে হত্যা করা হয়েছে।
তার মা জরিনা বেওয়া অভিযোগ করেন, ব্যাটারি হারানোর পর কলিম, আব্দুল মালেক এবং ময়নুলসহ কয়েকজন তহিরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। রোববার রাতে ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফেরার সময় তহিরকে তারা আটকের জন্য ধাওয়া করে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ হয়।
তিনি আরও বলেন, সকালে তহিরের মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিক থেকে বাড়ি আসি। আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা এখন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন তিনি।
নিহতের স্ত্রী লাইলী, মেয়ে মুক্তা এবং বোন কহিনুর বলেন, ব্যাটারি হারানো পর সন্দেহমূলক ভাবে স্থানীয় কুসুম্বা ইউপি সদস্য শাহিনুর রোববার বাড়িতে এসে ব্যাটারিটি মৃত আকবরের বাড়ি অথবা তার হেফাজতে দিয়ে আসার জন্য বলে যান। কিন্তু রাতেই যে এমন ঘটনা ঘটবে কে জানত।
ট্রাক্টরের মালিক সুলতান মাহমুদ রায়হান বলেন, ইটভাটায় রাখা ট্রাক্টরের একটি ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। এর আগেও একটি ব্যাটারি চুরি হয়েছিল। আমাদের সন্দেহ তহির এ কাজ করে থাকতে পারে। রোববার এক দোকানদার তাকে ব্যাটারি মাথায় নিয়ে ঘুরতে দেখেছিল। এতে আমরা নিশ্চিত যে, ব্যাটারিটি সেই নিয়েছে। তাকে বার বার বলা হয়েছিল ব্যাটারি দিয়ে দেয়ার জন্য। ইতোপূর্বেও তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ব্যাটারি ও তেল চুরির অভিযোগ আছে। কিন্তু কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
মান্দা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, তহিরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, সে মাদক সেবন করত। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে মাদক সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আব্বাস আলী/এমএমজেড/এমকেএইচ