আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের ঠেলাঠেলিতে সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ীরা
নাটোরে কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে ফায়দা লুটছেন আড়তদাররা। তবে আড়তদাররা বলছেন ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় নগদ টাকার সংকটে চামড়া কিনতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ ট্যানারি পাওনা অর্থ পরিশোধ করেছে।
আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগে লোকসানে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। বঞ্চিত হচ্ছে গরিব, এতিমসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর কাঁচা চামড়া বেচা-কেনার কেন্দ্র নাটোর। নাটোর শহরের ভৈদ্যবেলঘরিয়া এলাকায় রয়েছে শতাধিক চামড়ার আড়ত। এসব আড়তে সমগ্র উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলা থেকে চামড়া আনা হয়। ট্যানারি মালিকরা সমগ্র চামড়ার ৫০ ভাগের বেশি নাটোর থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন। শুধু ঈদ-উল-আযহার সময়ই নাটোরে ৯শ কোটি টাকার অধিক চামড়া কেনাবেচা হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
তবে এবার সরেজমিনে চামড়ার আড়তে গিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকেই চামড়া কিনে লোকসান করছেন। সরকার বেধে দেয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনছেন না। যে চামড়া তারা ৮শ টাকায় কিনেছেন সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৪শ টাকায়। নাটোরের আড়তগুলোতে গরুর চামড়া ৩ থেকে ৪শ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ৩০-৪০ টাকা করে দাম বলছেন।
পাবনার চাটমোহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি গুরুর চামড়া ৬শ থেকে ৮শ টাকা এবং খাসির চামাড়া দুই থেকে তিনশ টাকায় কিনেছিলেন। এখন নাটোরে আড়তে নিয়ে আসার পর গরুর চামড়া দুই থেকে তিনশ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বলে। বিক্রি করতে না পেরে চামড়াগুলো আড়তে রেখে লেবার নিয়ে লবণ দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছেন।
একই কথা বললেন পাবনা, বগুড়া এবং নাটোরের বিভিন্ন এলাকার মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও। তারা গরুর চামড়া ৬শ থেকে ৮০০ টাকা দরে ও ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে খাসির চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু নাটোরে চামড়ার আড়তে এসে ৪০ টাকা দরে গরুর চামড়া এবং ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে খাসির চামড়ার দাম বলে।
মৌসুমী এ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা করছি। চামড়ার এত কম দাম কোনো সময় দেখিনি। ট্যানারি ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়েছে। তাদের কাছে সবাই এখন জিম্মি। নগদ পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করি। যদি বছর বছর লোকসান গুনতে হয় তাহলে ব্যবসা করার দরকার কী?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ট্যানারি মালিকরা চামড়ার বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা পুঁজি স্বল্পতায় ভুগছে। তাছাড়া আমরা যে চামড়া কিনি লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে দুই থেকে তিনশ টাকা আরও খরচ হয়। তাছাড়া সরকার কোন চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট কী হবে তা নির্ধারণ করে দেয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
তবে চামড়ার দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারির মালিকরা পাওনা অর্থ পরিশোধ করছে না একথা ঠিক নয়। ঢালাওভাবে অভিযোগ করাও ঠিক হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ ট্যানারি আড়তদারদের টাকা দিয়েছে। তারা কম দামে চামড়া কিনছে। আমাদের কাছে বেশি দামেই চামড়া বিক্রি করবে। লবণযুক্ত চামড়া আমাদের এক হাজার টাকার ওপরে কিনতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন পর ট্যানারিগুলো চামড়া কেনা শুরু করবে। যেসব চামড়া ভালো থাকবে তা সরকার নির্ধারিত দামে কিনব।
এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহ মোহাম্মাদ রিয়াজ বলেন, আমরা চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার আহ্বান জানিয়েছি যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং নাটোরের চামড়া ব্যবসার সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে।
রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এমএস