ব্যতিক্রমী এক বঙ্গবন্ধু ভক্তের গল্প
পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের দাশুড়িয়া মোড়। অটোরিকশা স্ট্যান্ডে ছোটখাটো জটলা দেখে এগিয়ে যেতেই কানে এলো ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ’। কৌতূহল নিয়ে আর একটু এগোতেই চোখে পড়ল তর্জনি উঁচিয়ে ভরাট কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ দিচ্ছেন এক যুবক।
ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করতেই উৎসুক শ্রোতাদের একজন জানান, যুবকের নাম রফিকুল ইসলাম। পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্ধ ভক্ত।
কয়েকজন স্থানীয় অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক ব্যতিক্রমী ফেরিওয়ালা এই রফিকুল। জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা নিয়ে ঘোরেন আর যাত্রীদের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শোনান।
উৎসুক জনতার ভিড় কমলে কথা হয় রফিকুলের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মারা যাওয়ায় কিশোর বয়সে ধরেছেন সংসারের হাল। স্কুলের গণ্ডি পেরোতেই বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। জীবিকার তাগিদে করেছেন মাটি কাটার কাজ, দিনমজুরি।
বর্তমানে বেসরকারি সংস্থার ঋণে কেনা অটোরিকশার তিন চাকায় ঘোরে জীবনের চাকা। ছেলেবেলায় গ্রামের বাজারে মাইকে বাজানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ নাড়া দেয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর অন্ধভক্ত হয়ে শুরু করেন তার অনুকরণ।
রফিকুল জানান, নিয়মিত তিনি টেলিভিশনের খবর দেখেন, পড়েন খবরের কাগজ। সেসব মাধ্যমে প্রকাশিত লেখা থেকে জানার চেষ্টা করেন জাতির জনকের গৌরবগাঁথা। উচ্চকণ্ঠে ৭ই মার্চের ভাষণের অনুশীলনও করেন। এসব কাজে প্রতিবেশীরা একসময় পাগল ভাবলেও এখন তারাই দল বেঁধে আসেন রফিকুলের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে।
রফিকুলের চাচা ইদ্রিস বিশ্বাস বলেন, ছোটবেলায় যখন আমাদের সঙ্গে মাটি কাটতে যেত তখন কাজের ফাঁকে উঁচু ঢিবিতে উঠে বঙ্গবন্ধুর মতো করে ভাষণ দিত রফিকুল। আমরাও মজা পেতাম। তখন বিষয়টিকে আমরা ছেলেমানুষি ভাবলেও এখন বুঝি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালেবাসা কতটা।
রফিকুলের একাদশ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে রুমী ইসলাম বলেন, আব্বু যখন জোরে জোরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অনুশীলন করতেন তখন প্রতিবেশীদের অনেকেই পাগল বলে হাসাহাসি করত। আব্বু কারও কথায় কর্ণপাত করেননি। এখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আব্বুকে দেখতে আসে। আমাদের খুবই গর্ব হয়।
কী আছে এই ৭ই মার্চের ভাষণে, কেনইবা তা মানুষকে শোনান রফিকুল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ একটা কবিতার মতো। শুনলেই গা শিউরে ওঠে। কতটা শক্তি থাকলে একটা ভাষণ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে তারই প্রমাণ এই ভাষণ। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হয়। তাই আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই এ ভাষণ আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছি।
স্বাধীনতা দিবস, শোক দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে আশপাশের গ্রাম থেকে ভাষণ শোনানোর আমন্ত্রণ আসে রফিকুলের। নিজের জমানো টাকায় কেনা সফেদ পাঞ্জাবি-পাজামা আর মুজিব কোট পরে ভাষণ দিতে যান। ভাষণ শুনে মানুষের করতালি আর ভালোবাসায় সম্মানিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে আজীবন কাজ করার প্রত্যাশা তার।
আলাউদ্দিন আহমেদ/এফএ/পিআর