ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে নিয়ম বলে কিছু নেই!

প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দালালদের দাপট, অতিরিক্ত টাকা আদায়, টেবিলে-টেবিলে ঘুষ, গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও চরম হয়রানি প্রতিদিনের চিত্র। যেন লক্ষ্মীপুর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কার্যালয়ে নিয়ম বলে কিছু নেই! চাহিদা মতো টাকা না দিলে মেলে না সেবা। ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।

কার্যালয়ে ভেতর চেয়ার-টেবিল পেতে কর্মকর্তা সেজে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছেন দালালচক্র। এ ধরনের কয়েকজনকে ভ্রাম্যামাণ আদালতে কারাদণ্ড দেয়ার পরও কোনো সুফল আসেনি। সম্প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য কাজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারী আর দালালদের পোয়াবারো অবস্থা।

এদিকে বুধবার ওই কার্যালয়ে চিহ্নিত দালাল মান্দারী এলাকার কামাল উদ্দিন টেবিল পেতে কর্মচারী সেজে কাজ করার ছবি ক্যামেরায় ধারণ করায় সাংবাদিক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। আজাদ দৈনিক মানবকণ্ঠ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) স্থানীয় প্রতিনিধি। দালালদের পক্ষ নিয়ে এসময় মোটরযান পরিদর্শক নাজমুল হাসান তার কক্ষ থেকে তেড়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে ওই সাংবাদিকের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেন।

অভিযোগ রয়েছে, কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক নাজমুল হাসান ও সহকারী পরিচালক আইনুল হুদা চৌধুরী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দালালদের মদদ দিচ্ছেন। দালালরা এ কর্মকর্তাদের মাসোহারার বিনিময়ে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন অনিয়ম করছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, যেন সেখানে দালালরাই বড় কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে দালাল সিন্ডিকেট কাজ করছে। ১০-১২ জন দালাল নিয়মিত কার্যালয়ে যাতায়াত করেন। দালালদের কেউ কেউ আবার কার্যালয়ের ভেতর চেয়ার টেবিল পেতে কর্মকর্তা সেজে গ্রাহকদের বক্তব্য শুনছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা, দিচ্ছেন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস।

বিদায়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ কে এম টিপু সুলতান অভিযান চালিয়ে কয়েক ভুয়া কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করে সাজাও দিয়েছেন। সে সময় কিছুদিন অন্য দালালদের তৎপরতা দেখা যায়নি। চলতি বছরের শুরুতে ওই কার্যালয়ে মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে নাজমুল হাসান দায়িত্ব নেয়ার পর আবারও দালালরা ‘ঘাঁটি’ বসান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মোটর পরিদর্শক নাজমুল প্রতিটি ট্রাক ও পিকআপ ফিটনেস ফাইলে স্বাক্ষর দিতে দালালদের কাছ থেকে ৭শ, প্রতিটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ফিটনেস ফাইলে স্বাক্ষর করতে ৩শ, মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে ৩শ, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে ৫শ টাকা ঘুষ নেন। এছাড়াও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়ে থাকেন। আর এসব কাজে নির্ধারিত সরকারি ফি ছাড়াও দালালরা সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন।

জেলা বিআরটিএ কার্যালয় সূত্র জানায়, মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি যথাক্রমে ১৯ থেকে ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে দালালরা আদায় করেন। এছাড়া বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কথা বলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়।

সাংবাদিক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে জানান, টাকা দিলে বিআরটিএ অফিসে সবই সম্ভব। সেবা প্রত্যাশি কেউ প্রতিবাদ করলে দালালদের দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। কর্মকর্তাদের মদদে প্রকাশ্যে সেখানে দালালদের ঘুষ বাণিজ্য চলছে। ছবি ধারণ করার করায় তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

সদর উপজেলার দেওপাড়া গ্রামের সোহেল জানান, তিনি মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে পরিদর্শক নাজমুল হাসানের কক্ষে যান। এসময় তিনি দালাল কামালের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কামাল তার কাছে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ২৬ হাজার টাকা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটর পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এজন্য আমি লজ্জিত। দালালের বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব। দালালদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইনুল হুদা চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, দালালদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তবে মোটর পরিদর্শক নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলার খবর পেয়ে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছেন। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। ওই কার্যালয়ের অনিয়ম রোধ করে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে অচিরেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

কাজল কায়েস/এমজেড/আরআইপি