এবার পর্যটকশূন্য সিলেট
পর্যটনের জন্য প্রকৃতি কন্যাখ্যাত সিলেটের মানুষ এবার ঈদের আনন্দের সঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন। প্রতিদিনই নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে আসছেন ঘরমুখো মানুষ। এ সময় ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে মাটির টানে সিলেটের প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে দেশে আসেন।
এবার যারা এসেছেন তারা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে ডেঙ্গু আতঙ্ক থাকায় এবার ঈদে সিলেটে তেমন পর্যটক নেই। নগরের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন ঈদের এক সপ্তাহ আগেই রুম বুকি করে রাখতেন পর্যটকরা। কিন্তু এবার ৪০ শতাংশ রুমই বুকিং হয়নি। বলতে গেলে এবার ঈদে প্রায় পর্যটকশূন্য সিলেট।
সিলেটের সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেটে মোট ৩৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ভালো হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২২০ জন এবং সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১১০ জন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুস সালাম বলেন, এবার কোরবানির ঈদে পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসব বলে এক বছর আগ থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছি। এক সপ্তাহ হলো দেশে এসেছি আমি। কিন্তু সিলেটে যে হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে এটা নিয়ে আতঙ্কে আছি।
এদিকে, এবার দেশজুড়ে ডেঙ্গু দেখা দেয়ায় সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সবাই ডেঙ্গু আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থায় প্রায় পর্যটকশূন্য সিলেট।
ঈদে সিলেটে আসা বিভিন্ন জেলার মানুষের মধ্যে থেকে যাতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে না পড়ে এ নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে দেশে ফেরা প্রবাসীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে চিকিৎসক টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গুর জন্য পৃথক সিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট কিটসহ চিকিৎসার যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। যাতে গ্রামে বসবাসকারী বা কোনো পর্যটক আক্রান্ত হলে সেখানেই পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের অনেকেই ডেঙ্গু নিয়ে আসতে পারেন। আবার প্রবাসীদের কেউ কেউ সিলেটে আসার পর আক্রান্ত হতে পারেন। একইভাবে ঢাকা থেকে ছুটিতে আসা লোকজনের মধ্যেও ডেঙ্গু আক্রান্ত থাকতে পারেন। এজন্য ঈদের ছুটিতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সবকটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে যে ৮ বেডের ডেঙ্গু কর্নার রয়েছে, সেটি ছাড়াও ঈদের জন্য শিশু ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ড ও পুরুষ ওয়ার্ডে পৃথক সিট রাখা হয়েছে। এছাড়া আইসিইউতে দুটি সিট ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে শহীদ শামছুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় বলেন, এডিস মশার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এজন্য আতঙ্কিত না হয়ে বাসা-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে। এর মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ হবে।
প্রকৃতি কন্যা সিলেটে প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের ঢল নামে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা মাতিয়ে রাখেন সিলেটকে। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর কারণে পর্যটকদের জোয়ারে ভাটা পড়েছে।
সিলেট নগরের হোটেল ফার্মিস গার্ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফার্মিস আক্তার বলেন, অন্য সময় ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে আবাসিক হোটেলগুলো পর্যটকরা বুকিং দিয়ে রাখতেন। ঈদের দু’একদিন আগেই ভালো হোটেলগুলোর সিট বুকিং হয়ে যেত। কিন্তু এবার ঈদে এখন (রোববার) পর্যন্ত শতকরা ৪০ ভাগ সিট বুকিং হয়নি।
নগরের প্রায় সবকটি হোটেলেরই একই অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য বছর পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু এবার ফোনের জন্য অপক্ষো করতে হচ্ছে আমাদের।
পর্যটন মোটেল সিলেটের অভ্যর্থনাকারী মো. শাওন বলেন, রোববার সকাল পর্যন্ত আমাদের ৫১ ভাগ সিট বুকিং হয়েছে। আশা করছি বাকিগুলো বুকিং হয়ে যাবে। অন্য বছর এর আগেই বুকিং হয়ে যেত। এবার পর্যটকরা কম আসছেন।
ছামির মাহমুদ/এএম/জেআইএম