বৈধ-অবৈধ নিয়ে অস্ত্র হাতে রাস্তায় ছাত্রলীগ
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বৈধ-অবৈধ নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
ঘটনার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে দেশি অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। এতে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সহিংসতা এড়াতে উপজেলা সদরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বাউফল শহরে।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় বাউফল শহরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ কর্মী আশিক (২০) ও জিসানসহ (২১) পাঁচজন আহত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯ জুলাই বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ উপলেক্ষে উপজেলা ছাত্রলীগ প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। ৩১ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের সভপতি মো. হাসান সিকদার তার ফেসবুক থেকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। যেখানে ছাত্রলীগের প্যাডে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাউফল উপজেলা শাখা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো এবং আগামী এক বছরের জন্য ছাত্রলীগ বাউফল উপজেলা শাখার কমিটি অনুমোদন দেয়া হলো। কমিটিতে মো. আল-আমিন তোহা সভাপতি এবং মো. তানজিল হোসেন অভিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
তবে কতদিনের মধ্যে এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবে বা আগের কমিটির সভাপতি সম্পাদক কে ছিল সেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। আর যে দুইজনকে সভাপতি ও সম্পাদক করা হয়েছে তারা চলমান কমিটির কোনো পদে নেই। ওই প্যাডে সভাপতি হাসান সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক ভূইয়ার ২৮ জুলাই তারিখের স্বাক্ষর দেখা যায়।
১ আগস্ট সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ভূইয়া ওই কমিটি ভুয়া বলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তার ফেসবুকে প্রকাশ করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ২৮ জুলাই বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের যে কমিটি ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে তা ভুয়া, এটিতে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য তিনি আহ্বান জানান। এ বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদকে অবহিত করেছেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
এই কমিটিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অবৈধ ঘোষণার পর শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অবৈধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত সাইদুর রহমান হাসান সভাপতি ও মাহামুদ রাহাত জামেশেদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের কমিটি ব্যতীত অন্য কোনো কমিটি নেই।
এর জের ধরে বিতর্কিত কমিটি নিজেদেরকে বৈধ বলে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে ৪০-৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন বের করলে বৈধ কমিটির নেতাকর্মীদের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিতর্কিত কমিটির উদ্যোগে শোক র্যালি বের করার ঘোষণা দেয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত কমিটির নেতাকর্মীরা বাউফল থানা মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়।
পাশাপাশি জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত কমিটির নেতাকর্মীরা বাউফল প্রেস ক্লাবের পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে একপক্ষ অপরপক্ষের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী আহত হন। ঘটনার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ বিষয়ে চলমান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান হাসান বলেন, জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশ মোতাবেক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। একটি মহল ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার জন্য সংগঠন পরিপন্থী কার্যক্রম চালাচ্ছে। গায়ে পড়ে বিবাদ সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ঘোষণা পেলেই সম্মেলনের মাধ্যমে যারা যোগ্য তাদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে।
বিতর্কিত কমিটির সভাপতি মো. আল-আমিন তোহা নিজেকে বৈধ কমিটির সভাপতি দাবি করে বলেন, আগের কমিটি অবৈধ। ২৮ জুলাই ঘোষিত কমিটি বৈধ। এই কমিটির কার্যক্রমে কেউ বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে।
বাউফল থানা পুলিশের ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কমিটি বৈধ-অবৈধ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিক লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম