ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া
দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মাঠের সব প্রস্তুতি। শোলাকিয়ায় ১৯২তম ঈদুল আজহার জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। ইমামতি করবেন শহরের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান।
দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকছে দুটি বিশেষ ট্রেন। ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে র্যাব-পুলিশের পাশপাশি থাকছে দুই প্লাটুন বিজিবি।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপাশে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৬ একর জমির ওপর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করে শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নানদাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ করেন। তারও দুশ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।
শোলাকিয়া ঈদগাহে বড় জামাতে লাখো মুসল্লির সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ঈদের সময় এখানে ঢল নামে দেশ-বিদেশের লাখো মুসুল্লির। অনেকে বংশ পরম্পরায় ঈদের নামাজ পড়ে আসছেন এ মাঠে। ঈদগাহ মাঠের লাইন টানা, দেয়ালে চুনকাম, ওজুখানা মেরামতসহ শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। ঈদগাহ কমিটির পক্ষ থেকে দূরের মুসল্লিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে থাকা-খাওয়ার।
২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নেয়া হয়েছে, নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হবে ৫ প্লাটুন বিজিবি। নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিতে পারবেন না মুসল্লিরা।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ঈদের দিন জায়নামাজ ছাড়া মুসল্লিরা অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি জানান, মাঠের সাধারণ প্রস্তুতি ছাড়াও দফায় দফায় সভা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নানা প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। র্যাব-পুলিশ ছাড়াও ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। গত শুক্রবার শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির সবশেষ অবস্থা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক। তিনি জানান, মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্নে ঈদের নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতে পারবে। এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ঈদগাহের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগগাহ ময়দান ও এর আশপাশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ পড়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় পার হয়েছে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে হবে মাঠে। প্রবেশ পথে মুসল্লিদের কয়েক দফায় তল্লাশির মুখে পড়তে হবে। ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের আকাশে নজরদারি করবে শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা। নামাজের আড়ে ম্যাটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো মাঠ সুইপিং করা হবে।
পুলিশ সুপার জানান, বহিরাগত সন্ত্রাসী কিংবা অপরিচিত কোনো লোক যাতে ঈদের সময় আত্মগোপন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মেসে প্রতিদিন তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। নতুন কোনো ভাড়াটে উঠলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানাতে বাড়ির মালিকদের বলা হচ্ছে। এটি মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে। পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি মাঠের ভেতরে-বাইরে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমন করা হবে কঠোরভাবে।
এদিকে দূরের মুসুল্লিদের জন্য শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করছে রেলওয়ে। ভোর ৫টায় একটি ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে অপর ট্রেনটি ভৈরব থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৬টায়। জামাত শেষ হওয়ার পর দুটি ট্রেনই গন্তব্যে ফিরে যাবে।
নূর মোহাম্মদ/এমবিআর/জেআইএম