৩৮ হাজারে গরু কিনে ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি
পঞ্চগড় সদরের পশ্চিম মিঠাপুকুর এলাকার আইনজীবী সহকারী সাইফুল ইসলাম। বছর দেড়েক আগে ৩৮ হাজার টাকায় দুটি ছোট গরু কিনেছিলেন। এবারের কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য আন্তরিকভাবে গরু দুটি পালন করেছেন তিনি। কোরবানির হাটে তোলার প্রথম দিনেই ৮৫ হাজার টাকা করে গরু দুটি বিক্রি করেন সাইফুল।
সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশি গরু পালনে এত লাভ আগে চিন্তা করিনি। করতোয়া নদীর পাশের আমার বাড়ি। আমাকে গরুর জন্য খাবার কিনতে হয় না। প্রতিদিন নদীর আশপাশ এলাকায় ঘাস কেটে গরুর খাবার জোগাড় করি। বাড়ির লোকজন মিলে গরু দুটির যত্ন করেছি। যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি দাম পেয়েছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এ টাকার কিছু অংশ দিয়ে ছোট আকারের আরও দুটি গরু কিনব। বাকি টাকা ঈদের পর মেয়ের বিয়েতে কাজে লাগাবো।
সাইফুল ইসলামের মতো অনেক গৃহস্থ কৃষক ও খামারি এবার দেশি গরু পালন করে লাভবান হয়েছেন। স্থানীয় কোরবানির পশুর হাটে দেশি ও ভারতীয় গরুর আমদানি বেশি হলেও দাম বেশি হওয়ায় এখনো অনেক ক্রেতা কোরবানির পশু কিনতে পারেননি। তবে শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে বিভিন্ন পশুর হাট। ফড়িয়া ও ব্যাপারীদের জন্য দেশি এবং ভারতীয় গরুর দাম ভালো পাচ্ছেন খামারি আর গৃহস্থরা।
বৃহস্পতিবার জেলা শহরের প্রধান পশুর হাট রাজনগরহাট, এর আগে বোদা উপজেলার নগরকুমারি হাট, তেঁতুলিয়ার শালবাহানহাটসহ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাটগুলো। অধিকাংশ পশুর হাট যদিও ভারতীয় গরুর দখলে। কিন্তু জেলার বাইরে থেকে আসা ফড়িয়া-ব্যাপারীদের জন্য কোরবানির গরুর দাম গতবারের তুলনায় বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের।
জেলার সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন পশুর হাট থেকে ব্যাপারীরা প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাকে গরু কিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চগড়ে গরু কিনে বেশ লাভের মুখ দেখছেন বলে জানালেন ব্যাপারীরা।
এদিকে, জেলার তিনপাশজুড়ে ২৮২ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এসব পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রাতের আঁধারে চোরাপথে শতশত ভারতীয় গরু ঢুকছে বাংলাদেশে।
তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও সদর উপজেলার কমপক্ষে নয়টি পয়েন্ট দিয়ে এসব গরু পঞ্চগড়ে ঢুকছে। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা গরু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেখান থেকে ট্রাকে করে চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর, আটোয়ারীর ধামোর এবং সদর উপজেলার হাড়িভাষা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসা গরু উঠে পঞ্চগড়ের প্রধান পশুর হাট রাজনগর ও শালবাহান হাটে। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা করিডোর ছাড়াই গরু এনে হাটে তুলছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির একজন্য কর্মকর্তা বলেন, অবাধে ভারতীয় গরু আসছে, এ তথ্য সঠিক নয়। এছাড়া পঞ্চগড়ে শিগগির করিডোর চালু করা হবে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করিডোর চালু হলে সেখান থেকে সরকারি রাজস্ব জমা হবে।
রামেরডাঙ্গা এলাকার কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি নদীর পাশে বালুচরে ধানচাষ করি। সেই ধানের খড় খাওয়ানোর জন্য গরু পালন করেছি। হাটে গরুটি তুলেছি। আশা করি গরুটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব। দুই বছর আগে গরুটি ১৭ হাজার টাকায় কিনেছিলাম।
পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম শামীম বলেন, গরুর হাট ঘুরছি, এখনো কিনতে পারিনি। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে দুটি গরু কিনব। আজকেও গরুর হাটে এসেছি। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও আজকে দেখে শুনে গরু দুটি কিনতেই হবে।
রাজনগর হাটে গরু কিনতে আসা গরুর ব্যাপারী বগুড়া ধনুট এলাকার রইসুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগে থেকে পঞ্চগড়ে অবস্থান করছি। ভিন্ন ভিন্ন হাটে গিয়ে গরু কিনে ট্রাকে করে এলাকায় নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে আমার ভাই গরু বাজারে বিক্রি করছেন। প্রায় প্রতিদিনই গরু পাঠাই। এখানে গরুর দাম বেশি হলেও আমাদের লাভ হয়।
ভারতীয় গরুর দখলে পশুর হাটের তথ্য অস্বীকার করে রাজনগর হাটের ইজারাদার আব্দুর রহিম বলেন, হাটে দেশি গরুই বেশি উঠছে। কৃষক এবং খামার মালিকরা এবার গরুর দাম ভালো পাচ্ছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ দাস বলেন, এবারে কোরবানির হাটে গরু এবং ছাগলের দাম ভালো পাচ্ছেন খামার মালিক আর কৃষকরা। এবার জেলায় ৪৮ হাজার গরু এবং ১৭ হাজার ছাগল উৎপাদন করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় বেশি। জেলায় উৎপাদিত গরু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
সফিকুল আলম/এএম/এমকেএইচ