ঈদের আগে গরু চুরির আতঙ্কে খামারিরা
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র চারদিন বাকি। এই ঈদে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করে থাকেন। ঈদকে সামনে রেখে জমে ওঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১০১টি পশুর হাট বসছে। হাটগুলোতে এবার ভারতীয় গরু না ওঠলে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন খামারিরা। তবে তাদের মাঝে এখন গরু চুরি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গরু চুরির ঘটনাও ঘটেছে। আর তাই রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন খামারিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১২ শতাধিক খামার রয়েছে। এসব খামারে এক লাখেরও বেশি গরু-মহিষ পালন করছেন খামারিরা। জেলার ১০১টি পশুর হাটের মধ্যে সদর উপজেলায় স্থায়ী ৪টি ও অস্থায়ী ৮টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় অস্থায়ী ৮টি, নাসিরনগর উপজেলায় স্থায়ী ৩টি ও অস্থায়ী ৪টি, সরাইল উপজেলায় স্থয়ী ১টি ও অস্থায়ী ৫টি, নবীনগর উপজেলায় স্থায়ী ৩টি ও অস্থায়ী ১০টি, আখাউড়া উপজেলায় স্থায়ী ১টি ও অস্থায়ী ৪টি, কসবা উপজেলায় স্থায়ী ৫টি ও অস্থায়ী ১০টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অস্থায়ী ২৫টি এবং বিজয়নগর উপজেলায় ৬টি স্থায়ী ও ৪টি অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে।
ঈদের আগের দিন পর্যন্ত প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাটগুলো থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো পশু ক্রয় করতে পারবেন। হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।
তবে খামারিদের মনে এখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে কাজ করছে গরু চুরি। বিশেষ করে জেলার নবীনগর ও সরাইল উপজেলার খামারিরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন তাদের গরু নিয়ে। তাই ঘুম হারাম করে রাত জেগে এখন গরু পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। প্রতি বছর ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে গরু চোরের সংঘবদ্ধ চক্র। নবীনগর ও সরাইল উপজেলার খাল-বিল ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় থাকা খামারগুলোকে টার্গেট করে চোরেরা। গভীর রাতে ওইসব এলাকার খামার থেকে গরু চুরি করে গরু নিয়ে খুব সহজেই নদীপথে চম্পট দেয় তারা।
এখন পর্যন্ত নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৮টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলাও হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সরাইল উপজেলার রাণীদিয়া গ্রাম থেকেও দুইটি গরু চুরি হয়েছে। এ ঘটনায়ও থানায় মামলা হয়েছে। খামারিদের পাশাপাশি গরু চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছে ক্রেতাদের মনেও। সেই ভয়ে অনেকেই ঈদের আগের দিন গরু কেনার কথা ভাবছেন।
কয়েকজন খামারি জানান, কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য সারা বছর পরম যত্নে গরু পালন করে ঈদের আগ মুহূর্তে এসে বিপাকে পড়তে হয়। ঈদের এই সময়টাতে গরু চুরি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। রাত জেগে পাহারা দিয়েও গরু চুরি ঠেকানো যায় না। এর ফলে গরু চুরি নিয়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে খামারিদের মনে। গরু চুরি ঠেকাতে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ উপলেক্ষ্যে অনেকেই নদীপথে গরু নিয়ে যায়। কোন গরুটা চোরাই আর কোনটা বৈধ সেটা শনাক্ত করা কঠিন ব্যাপার। ঈদের সময় গরু চুরি বেড়ে যায়। আবার আমরা চুরি হওয়া গরু উদ্ধারও করি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে গরু পাহারা দেয়া সম্ভব না। তবে আমরা টহল বৃদ্ধি করেছি। গরু চুরির ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করা হয়েছে।
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/জেআইএম