সিলেট সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ
দেশীয় খামারি ও পশু বিক্রেতাদের স্বার্থে পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত সীমান্ত পথে পশু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হয়নি, বন্ধ হয়নি পশু আমদানি।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন চোরাইপথে ভারত থেকে আসছে শত শত গরু। মাঝে মাঝে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গরু-মহিষের দু-একটি চালান জব্দ করলেও বেশির ভাগ সময়ই চোরাকারবারিরা নির্বিঘ্নে দেশে গরু নিয়ে আসছে।
জানা যায়, সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি গরু ও মহিষ আসছে। আর সুনামগঞ্জের বাঁশতলা, ছাতক, দোয়রাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু।
বোশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোররাতে আসছে এসব ভারতীয় গরু। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দিনেও গরু নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা।
প্রতিদিন আসা শতাধিক গরুর মধ্যে মাঝে মধ্যে দু’একটি চালান আটক করে বিজিবি। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট জৈন্তাপুরের জঙ্গিবিল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আদমানিকালে ১১টি গরু জব্দ করে বিজিবির লালাখাল ক্যাম্পের সদস্যরা।
এর দুদিন আগে গত ২ আগস্ট সুনামগঞ্জের বাঁশতলা সীমান্ত থেকে ৬টি গরু, ৩১ জুলাই দোয়রাবাজারের মাঠগাঁও সীমান্ত থেকে ৩টি গরু আটক করে বিজিবি।
সাম্প্রতিক সময়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আমদানিকালে ১৩৭টি গরু আটক করা হয় বলে জানান বিজিবির ২৮ সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম।
জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুরের চিকনাগুল থেকে সিলেট নগর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অবৈধ হাট বসানো হয়েছে। এসব হাটেই তোলা হচ্ছে ভারত থেকে আনা চোরাই গরু। সব সমীন্ত দিয়েই গরু আমাদানির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে গরু আমদানি আগের থেকে অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন বিজিবির ২৮, ৪৮ ও ৫১ এই ৩ ব্যাটলিয়ানের অধিনায়করা।
অপরদিকে প্রাণিসম্পদ দফতরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম বলেছন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গরু আসা বন্ধ না হওয়ায় দেশীয় খামারিরা আর্থিক লোকসানে পড়বেন।
তিনি জানান, সিলেট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয় খামারগুলোতে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু আছে। এই বিভাগের ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন খামারির কাছে ২ লাখ ২ হাজার ৯০২টি পশু মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সিলেটে, আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে।
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। এতে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হতেন। কিন্তু ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য বিজিবির নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।
জানা যায়, ভারত কখনোই বৈধভাবে গরু রফতানি করে না। তবুও প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক গরু আসে বাংলাদেশে। বিজিবির সহযোগিতায় অবৈধভাবে আসা এসব গরু দেশে এসে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৈধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঈদের সময় ভারতীয় ব্যসায়ীরা অবৈধভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে গরু বিক্রি করতেন। অবৈধভাবে আসা এসব গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আটক করতো বিজিবি। জব্দ করা গরুগুলো তারা নিয়ে যেতেন নিকটবর্তী কাস্টমস অফিসে। এরপর কাস্টমস অফিসে প্রতি গরু বাবদ ৫০০ টাকা জরিমানা দিলেই এসব গরু বৈধ হয়ে যেত। তবে এজন্য বিজিবি সদস্যদের আলাদা করে টাকা দিতে হতো বলে জানান তারা। এবার মন্ত্রণালয় থেকে গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর কাস্টমসে জরিমানা দিয়ে গরু বৈধ করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বন্ধ হয়নি গরু আমদানি।
সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, প্রতামপুর, সোনারহাট, কোম্পানীগঞ্জের উৎমা, জৈন্তাপুরের লালাখাল, ডিবির হাওর, কেন্দ্রিবিল, গুয়াবাড়ি, চিকনাগুলসহ বিভিন্ন সীমান্ত এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়রাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার বিভিন্ন সীমান্ত প্রতিদিন দেশে আসছে শত শত ভারতীয় গরু। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ গরুই রাতে আসছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এমএমজেড/জেআইএম