দলে ভেড়াতে দুই যুবকের পুরুষাঙ্গ কাটল হিজড়ারা
দুই যুবক সাগর হোসেন আর প্রান্ত সরকার। একজনের বয়স ২২, অন্য জনের ১৮ বছর। সাগর পড়ালেখা করে, আর প্রান্ত সরকার রাজমিস্ত্রি। দুজনেরই চলাফেরা সমাজের অন্যদের মতোই ছিল। একদল হিজড়া তাদের দুইজনকে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। খুলনা অঞ্চলে একটি গুদাম ঘরে আটকে রেখে অচেতন করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুজনেরই লিঙ্গ পরিবর্তন করে দিয়েছে হিজড়ারা। এখন তারা গুরুতর অসুস্থ।
ভুক্তভোগী দুই যুবক বলেন, কেন তাদের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেয়া হলো। নিজেদের দলে ভেড়াতে হিজড়ারা কেন তাদের জীবন ধংস করে দিল। এখন তারা সমাজে কীভাবে বেঁচে থাকবেন। তারা এই অপরাধের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান ওই দুই যুবক।
ঝিনাইদহ শহরের আরাবপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন (২২)। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। পারিবারিক কারণে মাঝে কিছুদিন পড়ালেখা বন্ধ ছিল। পরে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছিল।
সাগর জানান, তার কণ্ঠ কিছুটা নারীদের কণ্ঠের মতো। এই কারণে হিজড়ারা তার পিছু নেয়। তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে হিজড়াদের এড়িয়ে চলতেন।
সাগর হোসেন জানান, গত ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার দিতে তিনি ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আরাবপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথে নবগঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ এলাকা থেকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর খুলনা ফুলতলা এলাকায় নিয়ে একটি গুদাম ঘরে আটকে রাখে। ওই রাতেই তাকে অচেতন করে ডাক্তারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও দেখতে পান পাশে প্রান্ত সরকার নামে আরেকজনের একই অবস্থা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর তাদের এলাকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। তার শরীর খারাপ হওয়ায় হিজড়ারা ২৫ জুলাই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ফেলে রেখে হিজড়ারা পালিয়ে যায়। পরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রান্ত সরকার (১৮) ঝিনাইদহ শহরের মহিষাকুন্ডু এলাকার উজ্জল সরকারের ছেলে। প্রান্ত জানান, হিজড়ারা গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শহরের তসলিম ক্লিনিকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ফুলতলা এলাকায় নিয়ে অচেতন করে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করে।
তিনি জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। অন্য দশজনের মতোই ছিলেন তিনি। এখন তার সমাজের কোনো স্থানে ঠাঁই নেই। পরিবারও তাকে মেনে নিতে পারছে না। এখন কোথায় যাবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না। সারাক্ষণ মুখ লুকিয়ে চলাফেরা করছেন।
সাগর ও প্রান্ত জানান, তারা এই অন্যায়ের বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ আদালতে পৃথক দুইটি মামলা করেছেন। এই মামলায় তারা আসামি করেছেন ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা আকাশী ওরফে খোকন (৪৫), ভুটিয়ারগাতি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা ওরফে আবু সাঈদ (৪২), উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা কারিশমা ওরফে লিয়াকত (৩০) ও ব্যাপারীপাড়া এলাকার মনোয়ারাকে (৫০)।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল ইসলাম জানান, তারা এই অন্যায়ের বিচার চেয়ে আদালতে পৃথক মামলা করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরি
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/জেআইএম