এবার বেনাপোলে সাড়ে ১২ কোটি টাকার ভায়াগ্রা পাউডার আটক
এবার বেনাপোলে মিথ্যা ঘোষণায় ভারত থেকে আমদানি করা দুই হাজার ৫০০ কেজি ভায়াগ্রা পাউডারের একটি চালান আটক করেছে বেনাপোল শুল্ক কর্মকর্তারা। যার বাজার মূল্য ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওপরে। বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউসিও) এর ১৮২ সদস্য দেশকে মাদক, বিস্ফোরক ও এ ধরণের ক্ষতিকর পণ্য চোরাচালানের বিষয়ে দীর্ঘদিন সতর্কবার্তা দিলেও বাংলাদেশেই দ্বিতীয় বারের মতো ভায়াগ্রা পাউডার আটক হলো।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বেনাপোল কাস্টমস অডিটোরিয়ামে কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এ ঘটনায় বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেসের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, ঢাকার ৪৭/সি মিটফোর্ড রোড এলাকার মেসার্স বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আই বি ট্রেডার্স থেকে দুই হাজার ৫০০ কেজি সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট পণ্য আমদানির জন্য চলতি বছরের ২১ মে ন্যাশনাল ব্যাংক লি. বাবু বাজার শাখায় একটি ঋণপত্র খোলেন (এলসি নং-৯৪৬১৯০১০৩৪২)। পণ্য চালানটি ভারত থেকে ২৬ মে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। যার মেনিফেস্ট নং-১৯১৯৩/১। পণ্য চালানটি খালাস নিতে ২৯ মে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। বিল অব এন্ট্রি নং-সি-৩৬৪৯৬। আমদানি পণ্য চালানটি ধরা পড়ার কিছুদিন আগে অসাধু একটি চক্রের অবাধে আমদানিযোগ্য পণ্যের আড়ালে অপঘোষণার মাধ্যমে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে ভায়াগ্রা নিয়ে যাবে মর্মে আমাদের কাছে গোপন সংবাদ আসে।
সে আলোকে সন্দেহজনক পণ্য চালানটি নজরদারিতে রাখা হয়। এরপর কাস্টমস হাউসের চৌকষ কর্মকর্তাদের একটি দল দিয়ে চালানটির আমদানি দলিল ও কায়িক পরীক্ষা করে নমুনা ওঠানো হয়। অধিক সতর্কতার জন্য কাস্টম হাউসের নিজস্ব অত্যাধুনিক ল্যাবে রমন স্পেক্টোমিটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা শেষে আমদানিকৃত পণ্য চালানটির মধ্যে ভায়াগ্রার উপাদান আছে বলে সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক একাধিকবার পরীক্ষা করে একই ফলাফল পেয়ে রিপোর্ট দেন। অত্যন্ত স্পর্শকাতর পণ্য বিবেচনায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে নমুনা বিসিএসআইআর ও বুয়েটে পাঠানো হলে পণ্যটিকে আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু অধিকতর পরীক্ষার জন্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফরে পাঠানো হয়। দীর্ঘ দুই মাস পর কুয়েট ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর পরীক্ষা করে পণ্যটিকে সিলডেনাফিল সাইট্রেট (ভায়াগ্রার মূল উপাদান) হিসেবে রিপোর্ট দেয়। কুয়েট ও ঢাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পরেই অপঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। মূলত বৈধ পণ্যের আড়ালে আমদানিযোগ্য পণ্য অপঘোষণা দিয়ে ভায়াগ্রা পাউডার পাচারের অপচেষ্টা করে।
তিনি বলেন, সিলডেনাফিল সাইট্রেট মূলত ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে কিছু বিশেষ ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইদানিং কিছু কোমল পাণীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোমল পাণীয় উৎপাদনে এ পণ্য ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ আছে। এছাড়াও ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হয়ে থাকে সিলডেনাফিল সাইট্রেট পাউডার।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার দিপা রাণী হালদার জানান, আমদানিকারক কোনো ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তবুও ওষধ প্রশাসন অধিদফতরের পূর্বানুমতি ব্যতীত আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ এর শর্ত ভঙ্গ করে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভায়াগ্রা আমদানি করেছে। চালানটি আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমদানিকারককে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেসের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জালিয়াতি ও অবৈধ পণ্য সুকৌশলে আমদানির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাবার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, উপ কমিশনার পারভেজ রেজা চৌধুরীসহ বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৪ জুলাই ঢাকার কলাবাগান এলাকার রেড গ্রীন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ফ্লেভার ঘোষণায় কোটি টাকা মূল্যের ২০০ কেজি ভায়াগ্রা পাউডারের চালান আটক করেছিল বেনাপোল কাস্টমস কর্তপক্ষ।
জামাল হোসেন/আরএআর/এমএস