এমপির সঙ্গে বিরোধ, বদলে গেল স্মার্ট কার্ড বিতরণের স্থান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) বিতরণে উপজেলা নির্বাচন অফিস কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করায় বীরগাঁও ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ভোটারদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদের সঙ্গে বিরোধের জেরে স্থানীয় এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের নির্দেশনায় স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
জানা গেছে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এমপি বুলবুলের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের। মঙ্গলবার বীরগাঁও ইউনিয়নের তিলোকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কথা ছিল। আর তিলোকা গ্রামেই ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের বাড়ি।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিলোকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিলোকিয়া, দুর্গারামপুর, শোভারামপুর, হরিপুর ও কিশোরপুর গ্রামের ভোটারদের মাঝে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য আগে থেকেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিল তারা।
কিন্তু সোমবার রাতে স্থানীয় এমপি বুলবুল নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ফোন করে তিলোকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক স্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন।
এদিকে ওই পাঁচ গ্রামের অধিকাংশ ভোটাররাই বিষয়টি জানতে না পেরে মঙ্গলবার সকালে তিলোকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। অনেকেই এমপি বুলবুলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে নবীনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, আমরা এমপি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে স্থান পরিবর্তন করেছি। বীরগাঁও স্কুলটি যেহেতু ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থলে তাই সেখান থেকে সবাই স্মার্ট কার্ড নিতে পারবে এমপি মহোদয় কে এমন নির্দেশনা দেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে (মঙ্গলবার) যারা নিতে পারেননি তারা বুধ ও বৃহস্পতিবার নিতে পারবেন। আমরা তিনদিন কার্ড দেব। এ পর্যায়ে পাঁচ গ্রামের সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখান থেকে বীরগাঁও যেতে হলে খাল-নদী পেরিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার যেতে হয়। আমাদের এমপি নির্বাচন অফিসারকে ফোন করে এই স্মার্ট কার্ড বিতরণের স্থান পরিবর্তন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উনি (বুলবুল) নৌকার বিরোধিতা করেছেন, আমরা নৌকার পক্ষে ছিলাম। তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে ওনার বিরোধ। যারা নৌকার নির্বাচন করেছেন তাদের ওপর চড়াও তিনি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে এমপি এবাদুল করিম বুলবুলকে ফোন করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে মাগরিব নামাজের পর ফোন করতে বলেন। পরবর্তীতে মাগরিবের নামাজের পর ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ নবীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান স্টিফেনের নাম ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে কেন্দ্রে পাঠাতে বলেন এমপি বুলবুল।
এদিকে স্টিফেনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে তিনি শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের ‘নিকট আত্মীয়’ বলে অভিযোগ তোলেন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েক প্রার্থী। বিষয়টি নিয়ে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে স্টিফেনকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহসম্পাদক কাজী জহির সিদ্দিক টিটুকে দলের মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী টিটুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামানের পক্ষে অবস্থান নেন এমপি বুলবুল ওই নির্বাচনে দোয়াত কলম প্রতীকে ৪৯ হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মনিরুজ্জামান। আর নৌকা প্রতীকে টিটু পান ৪৮ হাজার ৬৯০ ভোট। পরে ১৬ কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবিসহ নির্বাচনে এমপি বুলবুলের ‘বিতর্কিত’ ভূমিকা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন টিটু।
আজিজুল সঞ্চয়/এমএমজেড/জেআইএম