সিলেটের গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর আজ
সিলেটের গুলশান সেন্টারে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার ১৫ বছরপূর্ণ হলো আজ বুধবার (৭ আগস্ট)। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী নিহত ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
অল্পের জন্য রক্ষা পান তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই হামলায় ব্যবহৃত চারটি গ্রেনেড পাকিস্তান থেকে আনে জঙ্গিরা। কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠন ‘হিজবুল মুজাহিদীন’র জঙ্গী আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট পাকিস্তান থেকে গোলাবারুদ ও গ্রেনেড বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। হরকাতুল জিহাদ-হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন ও মুফতি আব্দুল হান্নানের সহায়তায় এগুলো নিয়ে আসা হয়।
সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের কাছে দেয়া হয় ৪টি গ্রেনেড। গুলশান সেন্টারে পাকিস্তান থেকে আনা গ্রেনেড দিয়েই হামলা করে জঙ্গিরা।
জঙ্গি হুমায়ুন কবির হিমু ও ফখরুল ইসলাম ফাহিম পরিকল্পনা অনুযায়ী মিশন ‘সাকসেস’ করে জঙ্গিরা। সিলেট নগরের তালতলার গুলশান সেন্টারে আলোচিত ওই গ্রেনেড হামলা মামলার নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য জানা গেছে।
আজ নৃশংস এই গ্রেনেড হামলার ১৫ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় হামলাটি চালানো হয়। হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম বর্তমানে চলছে। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য চলছে আর হত্যা মামলাটি এখনও বিচারিক কার্যক্রম চলছে অনেকটা ধীর গতিতে।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বেগম মমিনুন নেসা খানমের আদালতে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার ৬৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ জুন এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ৭ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
৮ আসামির মধ্যে মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা মামলায় এই ৩ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অপর ২ আসামি মাওলানা তাজ উদ্দিন ও হুমায়ুন কবির হিমু পলাতক রয়েছেন।
বর্তমানে মামলার অপর ৩ আসামি মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজা, মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মফিজ ওরফে অভি ওরফে মহিব উল্ল্যাহ ও আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট কারাগারে আটক রয়েছেন।
হত্যা মামলার তেমন অগ্রগতি নেই। একই ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি সিলেটের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। চলতি বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের বিচারক অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম থেমে যায়।
এরপর মামলার আর কোনো কার্যক্রম হয়নি বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিস্ফোরক মামলায় কারাগারে আটক ৩ আসামি ও পলাতক ২ আসামিসহ এই ৫ আসামি হত্যা মামলারও আসামি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিচারক পদায়নের পর মামলার কার্যক্রমে গতি আসবে। টার্গেট ছিল নেতাকর্মীদের হত্যা করা। গুলশান সেন্টারে হামলার ব্যাপারে জঙ্গি বিপুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর সিলেটের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট নুরে আলম সিদ্দিকী এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে বিপুল বলেছে, ঘটনার দিন হামলার পুরো পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন সম্পর্কে মুফতি হান্নানকে অবগত করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হিমুর কাছে থাকা দুটি গ্রেনেডের একটি আনা হয় গুলশান সেন্টারের জন্য। হিমু ও ফাহিম গ্রেনেডসহ সেখানে যায়। গুলশান সেন্টারের উল্টোদিকের মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে তারা।
মাগরিবের নামাজের পর গুলশানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বিপুল। জঙ্গি বিপুল নির্দেশ দেয় সুযোগ পাওয়া মাত্রই হামলা করবে। কিন্তু সামান্য পরই হিমু জানায়, মেয়র কামরান তো চলে গেছেন। আমি তার কাছে দাঁড়ানো থাকায় হামলা করা সম্ভব হয়নি। বিপুল জানতে চায় আর কোনো কোনো নেতা আছে জানাও।
হিমু বলে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ অন্য নেতারা আছে। এ কথা শোনার পর পরই বিপুল নির্দেশ দিয়ে হিমুকে বলে ‘থ্র’। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গিরা। মুহূর্তে রক্তে লাল হয়ে যায় গুলশান সেন্টারের সম্মুখস্থল। হামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী নিহত হন।
তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ ২১ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের শরীরে এখনো গ্রেনেডের স্প্রিন্টার রয়েছে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এই গ্রেনেডকে আর্জেস হ্যান্ড গ্রেনেড বলে মতামত দেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
ছামির মাহমুদ/এমআরএম