চাঁদপুরে শহর রক্ষা বাঁধে আবারও ধস, নদীর পেটে ৩১ ঘর
চাঁদপুরে মেঘনা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ২শ মিটার ব্লক ধসে পুরান বাজার হরিসভা এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ভাঙনে হরিসভা এলাকার ৩শ মিটার এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে।
রোববার বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকার সেমি পাকা ও টিনের ৩১টি বসতঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও বসতঘর, হরিসভা মন্দিরসহ চলাচলের সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা। বহু বসতঘর ভেঙে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
শনিবার রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ভাঙন শুরু হয়। রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থলে বালুভর্তি ৫শ জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ওইদিন রাতে ৪টি বসতঘর পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে নদীগর্ভে বিলীন হয় ১৫টি বসতঘর ও দোকানপাট। সর্বমোট ৩১টি পরিবার এখন ভিটেছাড়া।
এদিকে ভাঙনের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক ভাঙনস্থল পরিদর্শনে আসেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পরই আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। গত বছরও একই স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি রক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ দেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন না করায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় ভাঙন অব্যাহত থাকলে মানুষের বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দিরসহ পুরানবাজার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির চাঁদপুর দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনা ও উদাসীনতাই ভাঙনের মূল কারণ। এক মাস আগে নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির নেতারা এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অবহিত করেন। তারা তখন আমাদের বলেছেন, তাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে আজকের এই নদীভাঙন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, সংবাদ পেয়ে রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ৫শ জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পুলিশ, দমকল বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝী জানান, এ পর্যন্ত ৩১টি পরিবার তাদের ভিটে হারিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন। পরে রাতেই ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, গত কয়েক বছরই একই স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। পুরান বাজার এলাকার বাকি অংশ ভালো থাকলেও প্রায় ২শ মিটার এলাকায় প্রতিবছর সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ দেয়া হবে।
ইকরাম চৌধুরী/এফএ/পিআর