‘সকল নিয়ম-কানুন মেনেই জবানবন্দি নিয়েছি’
আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় টানা তিনদিন ধরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা তাকে জেরা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, আদালতে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন নুসরাত হত্যা মামলার সাত আসামি ও ছয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। গত ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট আদালত তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পরে ৪ আগস্ট রোববার আদালতে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা তাকে সাত আসামির ১৬৪ ধারায় গ্রহণ করা জবানবন্দি ও ছয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়ার বিষয়ে জেরা করেন।
তিনি আরও বলেন, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি গ্রহণের নিয়ম-কানুন মেনে করা হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি সব নিয়ম মেনেই জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে বলে আদালতকে জানান।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার সময় আসামিদের ৩ ঘণ্টা সময় দিতে হয়ে সেটি দেয়া হয়নি, আসামিদের জবানবন্দি নেয়ার আগে এটি তাদের বিপক্ষে যাবে তা অবহিত করা হয়নি ও পহেলা বৈশাখের দিন আদালত বন্ধ থাকার পরও কীভাবে জবানবন্দি নিয়েছেন তা জনতে চান।
জাকির হোসাইন বলেন, আসামিদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে ও তাদের সব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। বন্ধের দিনে জবানবন্দি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই দিন আদালতে আমার দায়িত্ব ছিল বলে আমি জবানবন্দি নিয়েছি।
এর আগে আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিলের ঘটনার পর বিভিন্ন সময় মামলার সাতজন আসামি আমার কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আমি সব নিয়ম-কানুন মেনে এই সাত আসামির জবানি গ্রহণ করি। এছাড়া মামলার ছয়জন সাক্ষীও আমার কাছে ১৬৪ ধারায় বয়ান দিয়েছিলেন।’
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাদীসহ ৭৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ৫ আগস্ট সোমবার ফেনীর আরেক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার দিন ধার্য করেছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের ওসি মো. শাহ আলম বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামি উপস্থিত ছিলেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের আদালতে আনা হয়।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/জেআইএম