৩০০ টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন
মাত্র ৩০০ টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে পিকআপ চালক উজ্জল হাওলাদারকে (২৫) গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ট্রাক টার্মিনালের চোরাই মালামাল পরিবহনের ভাড়া নিয়ে সেখানকার তিন শ্রমিকের সঙ্গে উজ্জলের বিরোধ হয়। সেই বিরোধ থেকেই পিকআপ চালক উজ্জলকে গলাকেটে হত্যা করে বালুচাপা দেয় ঘাতকরা।
রোববার দুপুরে নগরীর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানানো হয়।
নিহত উজ্জল হাওলাদার নগরীর কাশিপুরের গড়িয়ারপাড় এলাকার মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে। গত ২ আগস্ট কাশিপুরে নির্মাণাধীন ট্রাকস্ট্যান্ডের পাশ থেকে উজ্জলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই রাতেই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ কাজে নিযুক্ত সাব ঠিকাদার মো. সোহাগকে নগরীর আলেকান্দার বাসা থেকে গ্রেফতারা করা হলে তিনি উজ্জলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তী অনুযায়ী শনিবার ঢাকায় অভিযান চালিয়ে রবিউল ও রমজানকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় উজ্জলের পিকআপ ও হত্যায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম। তারাও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণসামগ্রী চুরি করে বিক্রি করতো সাব ঠিকাদার সোহাগ। সেগুলো উজ্জলের পিকআপে টার্মিনালে বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো। এজন্য উজ্জল দেড় হাজার টাকা ভাড়া পেত। সর্বশেষ চোরাই মাল পরিবহনে তাকে ১২০০ টাকা দেয়া হয়। পাওনা ৩০০ টাকা নিয়ে সোহাগের সঙ্গে উজ্জলের বিরোধ বাধে।
আসামিদের স্বীকরোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান আরও জানান, ৩০০ টাকা না পেয়ে রাগে উজ্জল মালামাল চুরির কথা প্রধান ঠিকাদার স্বপনের কাছে ফাঁস করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপন সাব ঠিকাদার সোহাগকে পাওনা ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ কারণেই সোহাগের নেতৃত্বে পিকআপ চালক উজ্জলকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া তিন আসামি পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন (১ আগস্ট বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে সোহাগ ও রবিউলের ফোন পেয়ে উজ্জল ট্রাক টার্মিনালে গেলে তাকে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে নেয়া হয়। সেখানে রবিউল ও রমজান উজ্জলের গলায় হাত দিয়ে কথা বলতে থাকে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে উজ্জলের গলার পেছনে আঘাত করে সোহাগ। পরে গলাকেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে কাথা পেঁচিয়ে টার্মিনালের পেছনে কাশবনের মধ্যে উজ্জলের মরদেহ বালুচাপা দেয়া হয়।
শুক্রবার বিকেলে উজ্জলকে খুঁজতে গিয়ে তার স্বজনরা একটি নতুন বালুর ঢিবি দেখে তাদের সন্দেহ হয়। বালুর ঢিবির পাশে উজ্জলের একটি স্যান্ডেল পড়েছিল। পরে সেটি খুঁড়লে উজ্জল হাওলাদারের গলাকাটা মরদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় উজ্জল হাওলাদারের মা পারভিন বেগম বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবু রায়হান সালেহ, বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক আব্দুর রহমান মুকুলসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাইফ আমীন/এফএ/পিআর