ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

যার ভয়ে সবাই কাঁপতো এখন তার কেউ নেই

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৯

কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের বডিগার্ড ও ১২ মামলার রাজসাক্ষী নুর আলম ২০ বছর পর মুক্তি পাচ্ছেন। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ও অন্য কোনো মামলা না থাকায় তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২৯ জুলাই) ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান অন্য কোনো মামলা না থাকলে নুর আলমকে কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দেন।

১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন নুর আলম। সেই থেকে গত ২০ বছর কারাগারে তিনি। নুর আলম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানার আজিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় জন্মস্থান কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের। খুলনায় বসবাসকালে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। সন্ত্রাসী থেকে বনে যান গডফাদার। খুন-ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে হয়ে যান অপরাধ জগতের খলনায়ক এরশাদ শিকদার।

তখন তার সঙ্গে যোগ দেন নুর আলম। একসময় এরশাদ শিকদারের বডিগার্ড হয়ে যান তিনি। বডিগার্ড নুর আলম এরশাদ শিকদারের ১২ খুনের সহযোগী।

জানা যায়, এরশাদ শিকদার গ্রেফতার হওয়ার পর নুর আলম রাজসাক্ষী হন। তার সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে খুলনার জলিল টাওয়ার মালিকের ম্যানেজার খালিদ হত্যা মামলায় এরশাদ শিকদারের ফাঁসির আদেশ হয়।

২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হয়। এভাবে একে একে ১১টি মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে কারাগার থেকেই এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন নুর আলম।

বাকি ছিল রাজধানীর লালবাগ থানার আজিজ অপহরণপূর্বক হত্যা মামলার সাক্ষ্য দেয়া। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি চার মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। গত সোমবার মামলাটির ধার্য তারিখে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আইনজীবী মুনতাছির মাহমুদ রহমান কারামুক্তির আবেদন করেন।

বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আবেদন মঞ্জুর করে নুর আলমকে কারামুক্তির আদেশ দেন। শুনানিকালে নুর আলমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে নেয়া হয়। সেখানে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজ মো. আলমগীর হোসাইন তার সঙ্গে কথা বলেন।

জজ মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, নুর আলম রাজসাক্ষী হয়ে ২০ বছর ধরে জেলে আছেন জানার পর তাকে লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে জামিন করানো হয়। নুর আলমের বিরুদ্ধে খুলনার একটি মামলায় প্রডাকশন ওয়ারেন্ট দেয়া আছে বলে জানতে পেরেছি। ওই প্রডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার হলে কারামুক্ত হবেন নুর আলম।

আলমগীর হোসাইন বলেন, ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে নুর আলম। কারাগারে থাকা অবস্থায় নুর আলমের ছেলে রাফী (১৮) মারা গেছে। স্ত্রীর বিয়ে হয়েছে অন্য জায়গায়। বাড়িঘর জমিজমা কিছুই নেই তার। প্রথম জীবনে নুর আলম জাহাজে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এরশাদ শিকদারের বডিগার্ড হিসেবে যোগ দেন তিনি। নুর আলম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানার আজিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।

এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী শিকদার। ১৯৬৭ সালে জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে যান এরশাদ শিকদার। কিছুদিন পর রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেললাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করতো এমন দলে যোগ দেন।

পরে তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং এলাকায় ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে পরিচিতি পান শিকদার। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে এরশাদ শিকদার রামদা বাহিনী নামে একটি দল গঠন করেন। যারা খুলনা রেলস্টেশন ও ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এই রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ শিকদার ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এরশাদ শিকদার। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুর আলম।

মো. আতিকুর রহমান/এএম/এমকেএইচ

আরও পড়ুন