ডেঙ্গুতে নিভে গেল শিক্ষিকার প্রাণ, কাঁদছে অবুঝ দুই সন্তান
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার ফকির মোহাম্মদ আকনকান্দি গ্রামের বর্ষা আক্তার (২৯) নামে এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বর্ষা আক্তার পৌরসভার ফকির মোহাম্মদ আকনকান্দি গ্রামের মিজানুর রহমান মাদবরের স্ত্রী। তিনি স্থানীয় শাহেদ আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তার স্বামী নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁ সোনালী ব্যাংকে চাকরি করেন। আফরিন রহমান নামে ছয় বছরের ও অরিন রহমান নামে দেড় বছরের এক দুধের সন্তান রয়েছে বর্ষার।
বর্ষার পরিবার জানায়, বর্ষা আক্তার ১৮ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। অসুস্থ শরীর নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতেন। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫ জুলাই পরিবারের সদস্যরা তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তার শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের আলামত পান। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ২৬ জুলাই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। শনিবার তাকে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকার প্র-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে কয়েক দফায় ১০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। তার অবস্থা ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গুতে পুলিশের এসআই কোহিনুরের মৃত্যু
বুধবার তার মরদেহ জাজিরার জব্বর আকনকান্দি গ্রামে আনা হয়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। দুপুরে তাকে গ্রামের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শাহেদ আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিলা আক্তার বলেন, বর্ষার প্রাণ ছিল মেয়ে দুটি। মা যখন স্কুলে থাকত তখন মেয়ে দুটিও তার সঙ্গে থাকত। বর্ষা না ফেরার দেশে চলে গেল, এখন তার দুটি শিশুকে কে দেখবে, ভাবলেই বুকের ভেতরটা কেঁদে ওঠে।
আরও পড়ুন : এক মশার কামড়ে অসহায় পরিবারের সবাই
বর্ষার স্বামী মিজানুর রহমান সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। স্ত্রীর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। পাঁচদিন স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছেন তিনি।
মিজানুর রহমান বলেন, বর্ষার নিথর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, এটা ভাবতে পারিনি। মেয়ে দুটি বার বার তাদের মায়ের খোঁজ করছে। আমি কি বলে তাদের সান্ত্বনা দেব? আল্লাহ কেন আমাকে এমন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেললেন।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা জাজিরায় বাড়িতে বসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত জাজিরায় সাতজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অন্য রোগীরা ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে জাজিরায় এসেছেন।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খলিলুর রহমান বলেন, বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলায় ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু সচেতনতার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। আমাদের উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের সর্বচ্চ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।
মো. ছগির হোসেন/এএম/পিআর