কৃষি কার্ড না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত নওগাঁর হাজারো কৃষক
শষ্যভান্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁ। প্রতি বছর জেলায় প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। জেলার প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বাকি খাদ্য সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
জেলার কৃষকদের কৃষি উপকরণসহ সবধরনের সরকারি সুবিধা সহজভাবে দিতে কৃষি কার্ড চালু করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এই তিন ধরনের কৃষক সরকারি সহায়তা পাবেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে কৃষি কার্ড হালনাগাদ করা হয়। তবে এ কার্ড থেকে বাদ পড়েছেন হাজারো কৃষক। কার্ড না থাকায় সরকারি গুদামে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। কৃষি কার্ড হালনাগাদ না হওয়ায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে কৃষকদের সুবিধার জন্য কৃষি কার্ড চালু করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়। জেলার ১১টি উপজেলায় মোট কৃষি কার্ডধারী কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় কার্ডধারী কৃষক পরিবার আছে ৪৬ হাজার ১০০টি। তবে সেখানে মোট কৃষক পরিবার আছে ৪৮ হাজার ৪১৪টি। ফলে কার্ড থেকে বাদ পড়েছেন ২ হাজার ৩১৪ জন।
জানা গেছে, বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ, ভর্তুকি, কৃষি ঋণ ও কৃষি পুনর্বাসনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কৃষি কার্ড। কৃষকদের কৃষি কার্ড দিয়ে ১০ টাকায় সোনালী ব্যাংকে হিসাব খোলা যায়। কৃষি বিষয়ে সুবিধা পেতে হলে কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু বর্তমানে কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারি মূল্যে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না হাজারো কৃষক। অনেক কৃষক জানেন না কোথায় কিভাবে কৃষি কার্ড করতে হয়। এছাড়া উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা কৃষি কার্ডের বিষয়ে কৃষকদের অবগত করেননি। আবার কৃষি কার্ড দেবে বলে নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে গেলেও দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সদর উপজেলার নিন্দইন গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, তার সাড়ে তিন বিঘা জমি আছে। বোরো মৌসুমে জমিতে প্রায় ৬০ মণ জিরাশাইল ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর ধানের আবাদ করতে খরচ বেশি পড়েছে। বাজারে ধানের দাম ৭২০-৭৪০ টাকা মণ। সরকারি গুদামে ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা মন। কৃষি কার্ড না থাকায় তিনি ধান গুদামে দিতে পারছেন না। গুদামে ধান দিতে হলে যে কৃষি কার্ড করতে হয় সেটা তার জানা ছিল না।
মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামের কৃষক ইনছের আলী বলেন, নিজের জমি আছে ১০ কাঠা। প্রতি বছর ৩-৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। বোরো মৌসুমে ৬০ মণ ধান পেয়েছেন। গত দুই বছর আগে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষি কার্ড দেবেন বলে নাম পরিচয় লিখে নিয়ে যান। তারপর আর কোনো খোঁজ নাই। বাজারে ধানের দাম কম। যদি কৃষি কার্ড থাকত তাহলে গুদামে ধান দিতে পারতেন। এছাড়া সরকারি সুযোগ সুবিধা ও প্রণোদনা পাওয়া থেকে বাদ পড়ছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি কার্ড না থাকায় কৃষকরা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার যদি মনে করে তাহলে আবার নতুন করে কৃষকদের তালিকা করে কৃষি কার্ড দেয়া শুরু করবে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে নতুন করে কৃষকদের কৃষি কার্ডের তালিকা করা বন্ধ আছে। যারা নতুন কৃষক হয়েছেন তাদেরও কৃষি কার্ড পাওয়ার অধিকার আছে। যদি এই কার্ডের মূল্য থাকে তাহলে অবশ্যই কার্ডটি নিয়মিত করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
আব্বাস আলী/এফএ/জেআইএম