ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ওসমানীতে ২০ ডেঙ্গু রোগী, সবাই ঢাকা ফেরত

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট | প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ২৫ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত পাঁচদিনে শুধু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২০ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭ জন।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তিন চিকিৎসক জানান, ওসমানী হাসপাতাল ছাড়াও সিলেটের বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ডাক্তারেরর চেম্বারে এসেও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে সিলেটে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪০ জনের বেশি হতে পারে।
এদিকে সিলেটে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কর্নার ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য করা হয়েছে। সেখানে রোগীদের মশারি টাঙিয়ে বেডে রাখা হয়েছে।

কর্তব্যরত সেবিকা শাহানারা খানম জানান, এ পর্যন্ত সেখানে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন সোমবার বিকেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

হাসপাতালে ভর্তির রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, চিকিৎসারত এসব রোগীর সবাই ঢাকায় ছিলেন। সেখানে থেকে তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর তাদেরকে এখানে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক (মেডিসিন) হিজবুল্লা জীবন বলেন, এ পর্যন্ত সিলেটে যেসব ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হয়েছেন, তারা সবাই ঢাকায় ছিলেন। সেখান থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে এসেছেন। তারা ছাত্র, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা। এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ালে তিনি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। এরপর সেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।

ডা. জীবন বলেন, ঢাকায় যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, তাই জরুরি কাজ না থাকলে এই সময়ে সেখানে না যাওয়াই ভালো। আর যারা ঢাকা যাচ্ছেন তারা যেন সতর্ক ও সচেতন থাকেন।

Shylet-2

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফসর উদ্দিন আহমদ জানান, ডেঙ্গুর সমন্বিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিশির চক্রবর্তীকে প্রধান করে একটি টিম করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত আছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।

ঢাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে আসলে এটা সিলেটের অবস্থানরত মানুষের কী ক্ষতি করতে পারে- জানতে চাইলে পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রকিবুল হাসান জুয়েল জানান, রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ যদি গ্রাামের বাড়িতে যায়, তাহলে তার মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ওই এলাকায় অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এবার এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের আবিদ হোসেন। কোচিং করতেন ফার্মগেটে, আর থাকতেন শান্তিনগর। ২৫ জুলাই জ্বর অনুভব করায় বাড়িতে চলে আসেন। পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। গত ২৭ জুলাই থেকে তিনি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি জানান, ওসমানী হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাই বাইরে থেকে তাদের পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নুরে আলম শামীম বলেন, ওসমানীতে ডেঙ্গু রোগী আসার পর থেকে সেখানে এ রোগের পরীক্ষাযন্ত্র আনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আশা করি দু-তিন দিনের মধ্যে হাসপাতালে পরীক্ষাযন্ত্র আসবে। এছাড়া সরকার পরীক্ষার জন্য যে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই মূল্যে পরীক্ষা করার জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।

ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। অফিস, ঘর ও আশপাশে পানি জমতে দেবেন না।

তিনি বলেন, যে কোনো পাত্রে জমিয়ে রাখা বা জমে থাকা পানি ৩ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করুন। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরিধান করুন। দিনে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও মশারি ব্যবহার করুন।

ছামির মাহমুদ/এমএমজেড/এমকেএইচ

আরও পড়ুন