টাকা দিয়ে পাওয়া যায় মেডিকেল সার্টিফিকেট
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার পরিবর্তে চলছে রমরমা সার্টিফিকেট বাণিজ্য। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অর্থের বিনিময়ে এবং ক্ষমতার প্রভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
ফলে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা। হাসপাতালে ভর্তিকৃত একই আহত রোগীকে একবার গ্রিভিয়াস, আরেকবার সিম্পল উল্লেখ করে এক ব্যক্তির নামে দুই দফায় দুইবার মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানেরও প্রমাণ রয়েছে।
চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামের নিরাঞ্জন মন্ডলের ছেলে আশুতোষ মন্ডল বলেন, গত ২৯ মে বিকেলে প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। আমার ইনজুরি অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রথমে গ্রিভিয়াস ধরন উল্লেখ করে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন। সে অনুযায়ী চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা হয়।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ২১ দিন ভর্তি থাকার পর রহস্যজনক কারণে গত ২০ জুন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমার ইনজুরি সিম্পল ধরন উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের মাধ্যমে আরেকটি মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে পাঠান। ফলে আমার মামলার আসামিরা খুব সহজে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় প্রভাব দেখিয়ে চলেছে এবং আমাকে দেখে নেবে বলে বার বার হুমকি দিচ্ছে।
আশুতোষ মন্ডলের চাচা শিক্ষক শংকর চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা গরিব বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে টাকা দিতে পারিনি। কিন্তু একই গ্রামের প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ সুরেশ মন্ডলের ছেলে সুশিল মন্ডল স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট প্রদানের ২১ দিন পর আরেকটি সিম্পল মেডিকেল সার্টিফিকেট কোর্টে পাঠিয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে হয় আমাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্যই তার এখন প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের ওষুধপত্র বিতরণেরও কোনো নিয়ম মানা হয় না। আমরা তার অধীনে চাকরি করায় তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারি না।
চরভদ্রাসন উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের ইউসুফ মোল্যার ছেলে মো.জাহিদ মোল্যা বলেন, মূলত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহত রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট দেন। কিন্তু ২১ দিন পর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উল্টো আরও ৩০ হাজার টাকা নিয়ে একই রোগীর নামে আরেকটি সিম্পল মেডিকেল সার্টিফিকেট ইস্যু করে কোর্টে পাঠান। এমন কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ একই রোগীর নামে দুটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়ার বিষয়ে বলেন, মাথায় গুরুতর জখম রোগী আশুতোষ মন্ডল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমি গ্রিভিয়াস সার্টিফিকেট দেই সত্য। পরবর্তিতে ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার ফলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করি।
তিনি বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালের একজন চিকিৎসক আমাকে ফোন করে সিম্পল সার্টিফিকেট দিতে বলেছে বিধায় আমি একই রোগীর নামে দ্বিতীয় দফায় সিম্পল মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করেছি। তবে উৎকোচ নিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বি কে সিকদার সজল/এএম/জেআইএম