কাস্টমস গোয়েন্দার বাড়িতে ঘুষের টাকা ভাগবাটোয়ারার সময় ধরা
দীর্ঘদিন ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছেন আমদানিকারকরা। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
আর ঘুষের টাকার সমন্বয় করে আসছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস সদর দফতরে কাস্টমস গোয়েন্দার সুপারিনটেনডেন্ট আইয়ুব আলী। নগরীর উপশহর এলাকার ১৭১ নম্বর বাসায় বসেই ভাগবাটোয়ারা হতো ঘুষের টাকা। প্রতিরাতেই সেখানে বসতো মদের আসর। তাতে কাস্টমস কর্মকর্তা ছাড়াও অংশ নিতেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
গোপন সংবাদ পেয়ে ওই বাড়িতে নজর রাখছিল রাজশাহী নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে অল্পের জন্য পালিয়ে যান সেখানে অবস্থান করা কয়েকজন কাস্টমস কর্মকর্তা। সেখান থেকে ঘুষের ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাত হাজার ডলার ও একটি রিভলবারও জব্দ করে পুলিশ।
আটকরা হলেন- আবু সাইদ নয়ন, আহসান কবির মিঠু, মনিরুল ইসলাম জুয়েল, বায়েজিদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আবু হাসান রুবেল ও আব্দুল মালেক। এদের মধ্যে নয়ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসিন্দা। মিঠুর বাড়ি শিবগঞ্জের কালুপুর এলাকায়। মিঠু শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদের জামাই।
এছাড়া বায়েজিদ হোসেনের বাড়ি সোনামসজিদ। আব্দুল মান্নান চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুরের বাসিন্দা। আর আবু হাসান রুবেল সোনামসজিদ স্থলবন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত কাস্টমস দফতরের সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেনের পিয়ন বলে জানা গেছে।
পুলিশ বলছে, বুধবার মনিরুল ইসলাম জুয়েলের লাইসেন্সে দুই ট্রাক ভারতীয় প্রসাধনী সামগ্রী আসে। এতে মোট ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করে ট্রাক দুটি বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষের জন্য তোলা ২০ লাখ টাকা রাজশাহীতে নেয়া হয়। সেই টাকা কাস্টমস কর্মকর্তাদের মাঝে ভাগবাটোয়ারার জন্য কাস্টমস গোয়েন্দার সুপারিনটেনডেন্ট আইয়ুব আলীর উপশহরের ১৭১ নম্বরের বাসায় জড়ো হয়েছিলেন তারা।
সেখানে কাস্টমসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার সময় তারা এ বাসায় জড়ো হয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মদপানসহ খাওয়া দাওয়া সেরে তারা বাসা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই সময় পুলিশ তাদের আটক করে।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারন চন্দ্র বর্মন। তিনি বলেন, অভিযানে জব্দকৃত অস্ত্র, টাকা ও ডলার বোয়ালিয়া মডেল থানায় নেয়া হয়েছে। আর আটকরা রয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
এদিকে আরেকটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সোনামসজিদ বন্দরে ভারতীয় প্রসাধনী আমদানিতে চলছে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব। কৌশলে আমদানিকারকদের শুল্ক ফাঁকিতে সহায়তা দিচ্ছেন সেখানকার কাস্টমস পরিদর্শক রোকনুজ্জামান ও সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেন। মোটা ঘুষের বিনিময়ে পণ্য মূল্যায়ন করছেন তারা।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/জেআইএম