পরকীয়ায় তছনছ রুমার সংসার
স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বামীর মারপিটে গুরুতর আহত স্ত্রী রুমা আক্তার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
গৃহবধূ রুমাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি স্বামী শফিকুল। রুমাকে এখন বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন তিনি। নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন অসহায় রুমা। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামে।
জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আকবর শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম সেকেনের (৩৫) সঙ্গে ২০০৫ সালে একই ইউনিয়নের ধুলদী রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার মণ্ডলের মেয়ে রুমা আক্তারের (৩০) বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে ১৩ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে রুমার ওপর নির্যাতন করতেন শফিকুল। নির্যাতন মেনে নিয়েই সংসার করে আসছিলেন রুমা। সম্প্রতি একই এলাকার একাধিক বিবাহিত এক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান শফিকুল।
বিষয়টি রুমা জানতে পেরে শফিকুলকে প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শফিকুল কোনো কথা না শুনে ওই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান। একপর্যায়ে রুমা তার স্বামীকে ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাধা দিলে রুমাকে মারপিট করেন। লোহার রড দিয়ে রুমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। গুরুতর অবস্থায় রুমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন শফিকুল। রুমা স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে তার বাবার বাড়ি অবস্থান করছেন।
রুমা আক্তার বলেন, ২০০৫ সালে আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে ১৩ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে আমার ওপর নির্যাতন চালায় স্বামী শফিকুল। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি তাই সব অত্যাচার মেনে নিয়েই সংসার করে আসছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের পরই শফিকুল একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যান। অনেক চেষ্টা করে সাত মাস পর জামিনে তাকে বের করে আনি। জামিনে থাকার চার বছর পর আবার ওই মামলায় গ্রেফতার হন। সেই সঙ্গে মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় শফিকুলের। এরপর হাইকোর্টে ঘুরে চার বছর পর জামিনে বের করি শফিকুলকে। এখন সে জামিনে রয়েছে। এত কিছু করার পরও শফিকুল আমার ওপর নির্যাতন করতো। তারপরও সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম।
রুমা বলেন, শফিকুল জেল থেকে বের হয়ে একই এলাকার একাধিক বিবাহিত এক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। শফিকুলকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শফিকুল ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেই। আমি বাধা দিলে আমাকে মারপিট করে। কয়েক দিন আগে ওই মেয়েটিকে নিয়ে আমার সঙ্গে শফিকুলের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় লোহার রড দিয়ে আমাকে মারপিট করে শফিকুল। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরলে আমি উঠে দেখি বাড়ির উঠানে আমাকে ফেলে রাখা হয়েছে। ঘরে তালা মারা।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে শফিকুল আমাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বড় মেয়েটা তার বাড়িতে রয়েছে, ছেলেটা আমার কাছে রয়েছে। হাসপাতালে একটি দিনও আমাকে দেখতে যায়নি শফিকুল। এখন বলে বেড়ায় আমাকে তালাক দেবে। আমি যদি মামলা করি তাহলে আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে। যার জন্য এতো কিছু করলাম আজ সে আমাকে রাখবে না। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
রুমার বাবা দেলোয়ার মণ্ডল বলেন, মেয়েকে সুখে রাখতে শফিকুলের জন্য অনেক কিছু করেছি। শফিকুল যখন মামলায় পড়ে তখন তার পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। তারপরও সে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন করে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু সালিশে শফিকুল সব অপরাধ স্বীকার করে মাফ চেয়ে পার পেয়ে যায়। বাড়ি গিয়ে আবার মেয়ের ওপর অত্যাচার চালায়।
মাচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. কাওছার শেখ বলেন, শফিকুল ও রুমার বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ করেছি আমিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। শফিকুল সালিশ-বৈঠকে সব স্বীকার করে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে আবার সেই আগের মতো রুমাকে মারপিট করে। সম্প্রতি রুমাকে মারপিট করে শফিকুল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে রুমাকে। শুনেছি শফিকুলের একটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক আছে। ওই বিষয়টি নিয়েই তাদের ঝামেলা। অনেকবার সালিশ করেছি সে কথা শোনে না। এখন তার কোনো বিষয়ে আমি নেই।
মাচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস ছত্তার মোল্যা বলেন, শফিকুল ও রুমা দুজন দুজনকে সন্দেহ করে। এ থেকেই তাদের মাঝে ঝামেলা হয়। শফিকুল ও রুমার দুজনেরই দোষ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধানে আসা যায়নি। সালিশে সব স্বীকার করে তারা। কিন্তু পরে আবার যা তাই। এ কারণে আমরা তাদের কোনো বিষয়ই এখন শুনি না।
অভিযুক্ত স্বামী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রুমাকে নির্যাতন করি বিষয়টি সঠিক নয়। তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হলো কি কারণে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার বাড়ির লোকজন এসেছিল আমার বাড়িতে। তাদের সঙ্গে ঝামেলার সময় আঘাত লাগতে পারে। সে কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’
পরকীয়ার বিষয়ে শফিকুল বলেন, রুমাকে বলেছি আমার অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে প্রমাণ দেখাও। রুমা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেইনি। সে একলা একলাই বাড়ি থেকে চলে গেছে।’
মাচ্চর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদ মুন্সী বলেন, শফিকুল ও রুমার পারিবারিক সমস্যা দীর্ঘদিনের। একাধিকবার সালিশ করেছি। কিন্তু তারা সংশোধন হয়নি। কয়েক দিন আগে রুমা ফোনে জানিয়েছিল তাকে আবার মেরেছে শফিকুল, সে হাসপাতালে ভর্তি। আমি বলেছিলাম সুস্থ হয়ে আসো, তারপর দেখব। বিষয়টি দেখি কি করা যায়।
বি কে সিকদার সজল/এএম/এমএস