নুসরাত হত্যা মামলায় ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। এ পর্যন্ত এ মামলায় বাদীসহ ৪১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৮তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদালতে অন্যতম আসামি উম্মে সুলতানা পপির চাচি মোসাম্মৎ রাবেয়া আক্তার, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন, স্থানীয় দোকানদার মো. ফজলুল করিম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাফর ইকবালের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামীকাল বুধবার (২৪ জুলাই) আরও ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত। এদিন সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিউদ্দিন খোন্দকার, উপাধ্যক্ষ রেজা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, স্থানীয় হাফেজ মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহিম, মো. নুর উদ্দিন ও আকরাম হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মামলাটির অন্যতম আসামি উম্মে সুলতানা পপির চাচি মোসাম্মৎ রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সফর আলী সর্দার বাড়ি। পপি আমার ভাসুরের মেয়ে। গত ১৯ এপ্রিল পিবিআই কর্মকর্তারা দুপুরে আমাদের বাড়ি আসেন। সঙ্গে আমার ভাসুরের মেয়ে পপিও ছিল। তারা পপিসহ তাদের ঘরে যান এবং পপির নিজ কক্ষের আলনা থেকে একটি নেভি-ব্লু রঙের বোরকা ও একটি পেস্ট রঙের ওড়না উদ্ধার করেন। এ সময় কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে দিলে আমি তাতে স্বাক্ষর দিই।’
অপর সাক্ষী স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজলুল করিম বলেন, পিবিআই কর্মকর্তারা ১৯ এপ্রিল দুপুরে আমাদের এলাকার পপিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় আরও অনেকের সঙ্গে আমিও সেখানে ছিলাম। পপির দেখানো মতে তার কক্ষ থেকে একটি বোরকা ও একটি ওড়না উদ্ধার করা হয়। পরে জব্দ তালিকায় আমিও স্বাক্ষর দিই।
অপর সাক্ষী স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর ইকবাল ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনও আদালতকে জানান, তারাও বোরকা-ওড়না উদ্ধারকালে সামনে ছিলেন এবং জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করেন।
আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্র ও বাদী পক্ষের শুনানিতে অংশ নেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের ওসি মো. শাহ আলম বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামি উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা তাদের জেরা করেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বেচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/এমএস