৪ মাস আগের আনারস এখন নৌকা
মাস চারেক আগেই ফিরোজুর রহমান ওলিও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার তার ছেড়ে দেয়া সুলতানপুর ইউপির চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে লড়াই করছেন ছেলে শেখ ওমর ফারুক।
সে সময় বাবার পক্ষে আনারস প্রতীকে ভোট চেয়ে নৌকার বিরোধিতা করা ওমর ফারুক এবার নিজেই নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে হাজির হয়েছেন। বিষয়টিকে অনেকটা ‘আনারসের বেপারী থেকে নৌকার মাঝি’ বনে যাওয়ার মতো মনে করছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক ফিরোজুর রহমান ওলিও প্রশাসনকে ব্যবহার করে এবং প্রচুর টাকা ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের ‘নিশ্চিত জয়’ ছিনিয়ে নেন। এবার ভোটের মাঠে ছেলের প্রচারণায় জয় নিশ্চিত বলে তিনি বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এতে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাকি প্রার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজুর রহমান ওলিও। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান অংশ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবার সেই পদে নিজের ছেলেকে বসাতে চাইছেন তিনি। ফলে এখন এক পরিবারেই সব চেয়ার দখলে রাখার চেষ্টার সমালোচনা হচ্ছে সুলতানপুর জুড়ে ।
ওলিওর পদত্যাগের কারণে সুলতানপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই পদে আগামী ২৫ জুলাই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত লড়াই হবে তিন জনের মধ্যে। তারা হলেন- শেখ ওমর ফারুক (নৌকা), স্বতন্ত্র শেখ মো. মহসীন (আনারস) ও মো. সোহরাব খান (ঘোড়া)।
প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর অভিযোগ ছেলের জয়ের জন্য মাঠে টাকা ছড়িয়ে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছেন ওলিওর।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সোহরাব খান অভিযোগ করেন, ফিরোজুর রহমান ওলিও মনোনয়ন দাখিলের পর থেকে মাঠে নেমে ছেলের নির্বাচন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনে ছেলে ওমর ফারুকই জয়ী হবে। এতে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা।
আরেক প্রার্থী শেখ মো. মহসীন অভিযোগ করেন, ‘মূলত সুলতানপুরের মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু ফিরোজুর রহমান ওলিও মিছিল-মিটিং করে মাইক দিয়ে বলছেন আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, আমার ছেলে ফেল করবে নাকি। প্রশাসন তার সঙ্গে আছে। এর ফলে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ আগেও ছিলাম, এখনও আছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করলে দলীয় কোনো বাধা থাকবে না। সেজন্য আমার বাবা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি খুবই সাধারণভাবে চলাফেরা করি। আমাকে দেখে কেউ মনে করবে না আমি অর্থ-বিত্তের মালিক। আমরা এলাকার জন্য কী অবদান রেখেছি সেটা দেখেই জনগণ ভোট দেবে, অর্থ-বিত্ত থাকলেই যে ভোট দেবে এরকম মানুষ মনে করে না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন করলে তো অনেকে অভিযোগ করবেই, আপনারা অভিযোগের বিষয়টি ভালো করে জেনে দেখুন। আর জয়ের ব্যাপারে আমি বলেছি, এটাতে কোনো ভুল নেই। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেই আমি জয়ের কথা বলেছি।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজেনের লক্ষ্যে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাত জাহান।
আজিজুল সঞ্চয়/এমএমজেড/এমকেএইচ