জাজিরায় এবারও ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মা
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে পদ্মা নদীর পার ভাঙতে শুরু করেছে। এরমধ্যে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
গত ছয় দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ওই গ্রামের ১৫ বিঘা ফসলি জমি। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে ৯টি পরিবার।
জানা গেছে, পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের জিরো পয়েন্টের শাহজাহান খানের বাড়ি থেকে শুরু করে সিরাজুল বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙন প্রবণ। গত ১২ বছরে নদীভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। এ বছরও এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ৬ দিনে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে গেছেন গ্রামটির সিরাজুল বেপারী, ইদ্রিস বেপারী, মজিবর ছৈয়াল, আবু কালাম মৃধা, সজল তালুকদার, শাহজাহান খাঁ, রুবেল বেপারী, নুরু বেপারী ও কালাম বেপারী।
ভুক্তভোগীরা জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে জাজিরা উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি এলাকায় পদ্মার পাড়। গত ছয় দিনে পদ্মা পাড়ের ফসলি জমি ও গাছপালা ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন।
সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পদ্মায় প্রচুর স্রোত বইছে। স্রোতের ঢেউয়ে পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। পাশেই কয়েকটি শূন্য ভিটা পড়ে আছে। দেখেই বোঝা যায়, কয়েক দিন আগেও সেখানে বসতবাড়ি ছিল। নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে পরিবারগুলো অন্যত্র চলে গেছে।
ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে।
সিরাজুল বেপারী, লাইলি বেগমসহ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বলেন, বাপ-দাদার ভিটে-মাটিতে থাকতাম। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে তা চলে গেল নদীতে। ফলে এখন বাধ্য হয়েই অন্যের জমিতে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।
পূর্ব নাওডোবা ইউপি সদস্য মঙ্গল মাদবর জানান, কয়েক দিন ধরে নদীতে তীব্র স্রোত বইছে, সঙ্গে পানিও বেড়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল স্রোতে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। আতঙ্কে স্থানীয় ৯টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০০ গজ ভেতরের দিকে কয়েক দিন আগেও কয়েকটি বসতভিটা ছিল বলে তিনি জানান।
পূর্বনাওডোবা ইউপি চেয়ারম্যান লাল চাঁন মাদবর বলেন, আমি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই পরিবারগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণসহ সব সহযোগিতা দেয়া হবে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন বণিক বলেন, জাজিরা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে ৭৩ মিটার ভাঙন প্রবল। ভাঙন রোধে ৪ হাজার ৩০০ জিও ব্যাগ ফেলা হবে। শনি ও রোববার ৮০০ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে আগের থেকে এখন ভাঙনের মাত্রা কমে গেছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হলে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে পাউবো কাজ করছে। নড়িয়া উপজেলায় ভাঙন রোধ হয়েছে। জাজিরার পূর্বনাওডোবা ভাঙছে শুনলাম। আমি জেলা পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব, তারা যেন ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। যাতে করে আর একটি ঘরও যেন ভাঙনের কবলে না পড়ে।
মো. ছগির হোসেন/এমএমজেড/পিআর