গাইবান্ধায় নতুন করে আরও ২৫ গ্রাম প্লাবিত
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও আজ আবার নতুন করে করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে করতোয়া নদীবেষ্টিত গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলা চত্বরসহ নতুন করে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪ শতাধিক গ্রাম ও গাইবান্ধা পৌরসভার বেশির ভাগ অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। সরকারি হিসাবে, গাইবান্ধায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ও গাইবান্ধার ওপর দিয়ে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ আছে ।
সরেজমিনে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় গাইবান্ধায় ৫টি বাঁধের ১৫টি অংশে ধসে যাওয়ায় সদর উপজেলার সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সাদুল্যাপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার (২০ জুলাই) দিনভার নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাঘাটা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক বিভিন্ন ভবন। যে কোনো সময় সাঘাটার বোনারপাড়া খাদ্য গুদামে বন্যার পানি প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়াও সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের থৈকরের পাড়া, আমদির পাড়া, বাদিনারপাড়া মেছটসহ ১০ গ্রাম এবং কামালেরপাড়া ইউনিয়নের শাহবাজেরপাড়া, হাসিলকান্দি, ছিলমানেরপাড়া, গড়গরিয়াব, ভগবানপুর,ফলিয়াসহ ১০ গ্রাম ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছে ।
অপরদিকে বন্যার পানিতে ডুবে গত দুই দিনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের সুগার মিল কলোনি এলাকায় মনু মিয়ার মেয়ে মুন্নি (৭) ও সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের জাহেদুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতী খাতুন (১০) মারা গেছে।
কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা দৌলতুজ্জান জাগো নিউজকে জানান, শনিবার সকালে বন্যার পানি ছিলমানেরপাড়া প্রবেশ করায় এই গ্রামের শতাধিক মানুষ কয়েক ঘণ্টায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে । গরু-ছাগল দিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও সাপের ভয়ে রাতে জেগে থাকতে হচ্ছে।
জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা মিনহাজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, মাত্র দুই ঘণ্টায় কয়েক কিলোমিটার তলিয়ে গিয়ে জুমারবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়েক বিঘা জমির কাঠ কচু পানিতে তলিয়ে গেছে ।
জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোস্তম আলী জাগো নিউজকে জানান, পানির চাপে গত ১২ ঘণ্টায় ১০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে । এভাবে পানি বাড়লে আগামীকাল আরও বেশ কয়েকটি গ্রান নতুন করে প্লাবিত হবে।
অপরদিকে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জাকির জাগো নিউজকে জানান, তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে আরও মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। তাই সরকারের শুভ দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী জানান, স্কুলগুলোতে পানি ওঠায় এবং বন্যার পাঠ দানের পরিবেশ না থাকায় ২৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে সদর উপজেলার একটি এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৩টিসহ মোট ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান গত ১২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর বইছে। অপরদিকে তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও করতোয়া নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসিমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. রোখছানা বেগম জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৩৮৩টি গ্রামের ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫০ জন মানুষ পানিবন্দি। ৪৪ হাজার ৭৯২টি বসতবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ১৮০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৪ হাজার ১০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়াও বন্যায় ৫৭৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ২৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৩ কিলোমিটার বাঁধ, ২১টি কালভার্ট এবং ১০ হাজার ৮৩৩ হেক্টর আবাদি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ১৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৬৪টি মাদরাসা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আকস্মিক বন্যায় ডোবা পুকুরগুলো ডুবে যাওয়ায় দুই হাজার ৯৪১টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরকারের কাছেও পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। তাই দেশে কোনো ত্রাণ সংকট হবে না । বন্যাকবলিত কোনো মানুষ যাতে অনাহারে না থাকে সেদিক খেয়াল রেখে আমরা চারদিন থেকে চাল, ডাল, তৈল শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ দিয়ে আসছি। বন্যাকবলিত মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
জাহিদ খন্দকার/আরএআর/জেআইএম