রাজবাড়ীতে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি
গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ (শনিবার) গোয়ালন্দোর দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ও পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং রাজবাড়ী সদরের মহেন্দ্রপুর গেজ স্টেশন পয়েন্টে ১ দশমিক ০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার ফসলি জমি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদি পশুর খাবারের সংকট।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে বাঁধের বাইরে থাকা কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও মূল ভূখণ্ডে এখনও পানি প্রবেশ করেনি। তবে বন্যা মোকাবিলায় শুকনো খাবার, নগদ অর্থ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত তিন/চার দিনে পদ্মায় পানি বাড়ায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের নয়নসুখ ও গোয়ালন্দের ছোট ভাকলার অন্তার মোড়, দেবগ্রামের কাউয়াজানি ও দৌলতদিয়ার সাত্তার মেম্বর পাড়া প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় দুই শতাধিক বসবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে এবং তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি। কৃষকদের বুক পানিতে দাঁড়িয়ে পাট কাটতে দেখা গেছে।
এছাড়া পানিবন্দি পরিবারের অনেকে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু থাকা-খাওয়া এবং গবাদি পশুর খাবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী বা সহযোগিতা পাননি বন্যায় নিমজ্জিত পরিবারগুলো। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানিবন্দিরা বলেন, তাদের বাড়িতে পানি ওঠায় অন্য বাড়িতে গিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। এছাড়া খাবার পানি ও গবাদি পশুর খাবার নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। পানিতে ধান ও পাট ডুবে গেছে। তাই অনেকে ডুবিয়ে পাট কাটছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য/সহযোগিতা পাননি।
রাজবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, জেলার ৪৫ কিলোমিটার অংশে শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। এর প্রায় ২৪টি পয়ন্টে ভাঙন রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে ভাঙন কবলিত স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেছেন। পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। নদীর পানি বাড়লেও বন্যার পানি জেলার মূল ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করেনি। তবে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে বাঁধের বাইরের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, নগদ অর্থ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুদ আছে এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো সমস্যা হবে না।
আজও পানি বিপৎসীমার ওপরে
এদিকে আজও (২০ জুলাই) রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে জেলা প্রশাসন ও পাউবো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আজ গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ও পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া রাজবাড়ী সদরের মহেন্দ্রপুর গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মায় পানি বিপৎসীমার মাত্র ১ দশমিক ০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজবাড়ী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মায় পানি বেড়ে জেলার দুটি গেজ স্টেশন পয়েন্টে আজ (শনিবার) সকাল থেকে বিপৎসীমার ওপরে এবং একটিতে সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/এমকেএইচ