সার্জেন্ট কিবরিয়া হত্যা : কাভার্ডভ্যান চালকের রিমান্ড চায় পুলিশ
ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে চাপা দেয়া যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানটি তল্লাশি করে দেখবে পুলিশ। কাভার্ডভ্যানটিতে কোনো অবৈধ মালামাল বহন করা হচ্ছিল কি-না তা নিশ্চিত হতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ঘাতক চালক জলিল মিয়ার সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালক জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক মো. শামীম আহম্মেদ আসামির উপস্থিতিতে আগামী ২১ জুলাই রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
আরও পড়ুন : চোখের জলে সার্জেন্ট কিবরিয়াকে শেষ বিদায়
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর বন্দর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চালক জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী ২১ জুলাই শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জলিল মিয়ার কাছে সেদিন এত দ্রুততার সঙ্গে পালানোর চেষ্টার পেছনে কী কারণ ছিল তা জানতে চাওয়া হবে। সর্বোপরি মামলার তদন্তকাজ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে করা হচ্ছে। আসামি জলিল মিয়া যেন সর্বোচ্চ সাজা পান।
তিনি আরও বলেন, বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণে যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানটি থামতে সংকেত দিয়েছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তবে কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন। তবে চালক জলিল মিয়া কাভার্ডভ্যানটি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান।
আরও পড়ুন : সার্জেন্ট কিবরিয়ার জন্য কাঁদছেন সহকর্মীরা
এসআই আব্দুল মালেক বলেন, চালক জলিল মিয়ার দ্রুত পালানোর চেষ্টা বিভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। সে কারণে যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানটিতে তল্লাশি করে দেখা হবে ভেতরে কোনো অবৈধ মালামাল ছিল কি-না। এ বিষয়ে যমুনা গ্রুপের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তল্লাশির সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও যমুনা গ্রুপের নির্ধারিত কোনো প্রতিনিধিকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া। কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন।
তখন কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল মিয়াসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
আরও পড়ুন : কাভার্ডভ্যান চাপায় সার্জেন্ট কিবরিয়া হত্যার কঠোর বিচার দাবি
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নে। তার বাবা ইউনুস সরদার সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
সাইফ আমীন/আরএআর/এমকেএইচ